ছয় ঋতু ফিরে ফিরে নৃত্য করি নৃত্য করি আসি/ নব নব পাত্র ভরি ঢালি দেয় তারা/ নব নব বর্ণময়ী মদিরার ধারা/ তোমাদের তৃষিত যৌবনে”। ষড়ঋতুর এই দেশে প্রতিটি ঋতু তার নিপুণ হাতের তুলি দিয়ে এই বাংলাকে সাজিয়ে দেয় অপরূপ সাজে। দুয়ারে দাঁড়িয়ে বৈশাখ।
চৈত্র অবসান-
গাহিতে চাহিছে হিয়া পুরাতন ক্লান্ত বরষের/ সর্বশেষ গান।
আজ চৈত্র সংক্রান্তি। চৈত্র মাসের শেষ দিন। ঋতুরাজ বসন্তেরও শেষ আজ। বাংলা সন ১৪২০ তার শেষ গান গেয়ে আজ বিদায় নেবে। বসন্তকে বিদায় জানিয়ে আসবে নতুন বছর। ঋতুচক্রের পরিক্রমায় শুরু হবে গ্রীষ্মকাল। আগামীকাল বিশ্বজুড়ে বাঙালিরা মেতে উঠবে বর্ষবরণ উত্সবে। বৈশাখ আসবে নতুন দিনের বারতা নিয়ে। দেবে ডাক-
ওই বুঝি কালবৈশাখী সন্ধ্যা-আকাশ দেয় ঢাকি/
ভয় কী রে তোর ভয় কারে, দ্বার খুলে দিস চার ধারে¬-
এই চৈত্রসংক্রান্তিকে কেন্দ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসে লোকউত্সব। বাংলা মাসের শেষ দিনটিকে ঘিরে শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে এই দিনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্ম করে থাকে বিভিন্ন ধর্মীয় সমপ্রদায়ের মানুষ। তবে প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এটি নানা আয়োজনে পালন করে থাকে। চৈত্র সংক্রান্তির প্রধান উত্সব চড়ক। এর সঙ্গে চলে গাজনের মেলা। এই গাজনের মেলা চৈত্র সংক্রান্তি থেকে শুরু করে আষাঢ়ী পূর্ণিমা পর্যন্ত চলে।
আগে গ্রাম বাংলায় এ চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে আচার-অনুষ্ঠানের অন্ত ছিল না। সংক্রান্তিতে সারারাত ধরে চলতো কীর্তন। গৃহিণীরা সংক্রান্তি উপলক্ষে ঘরদোর লেপা-পোছা করতেন। তবে অনিবার্য ছিল সংক্রান্তি উপলক্ষে গৃহস্থ নারীর ব্রত পালন। সারা চৈত্র মাস জুড়ে নারীরা ব্রত পালন করতো স্বামী, সংসার এবং ফসলের শুভ কামনা করে।
চৈত্র সংক্রান্তির মেলা উপলক্ষে গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থরা নাতি-নাতনিসহ মেয়ে-জামাইকে সমাদর করে বাড়ি নিয়ে আসতো। সম্পন্ন গৃহস্থরা সকলকে নতুন জামাকাপড় দিত এবং খাবার-দাবারের আয়োজন করতো।
বাংলা সনের শেষ দিনটিতে আজ চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ও নানা পর্ব মনে করিয়ে দিচ্ছে নতুন বছর দোরগোড়ায়। সাদর আমন্ত্রণে মাঙ্গলিক চিন্তা ও শুভবোধের উদ্বোধনে হূদয়সিক্ত প্রাপ্তির ডালিতে নতুনের অভিষেকের দিন পহেলা বৈশাখ কাল। শুভ হালখাতা, মেলা, গান-বাজনা, প্রদর্শনীর আয়োজনে বাঙালি উদযাপন করবে এ দিনটি। চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে লোকমেলার আয়োজন গ্রাম-গঞ্জেই হয় বেশি। মেলা, গান বাজনা, যাত্রাপালাসহ নানা আয়োজনে উঠে আসে লোকজ সংস্কৃতির নানা সম্ভার। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মেতে ওঠে পূজা- অর্চনায়।
চৈত্র সংক্রান্তিকে কেন্দ করে সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে শেকড়ের টানে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে বাঙালিরা। রাত পোহালেই নববর্ষ বাঙালি জাতির জীবনে কল্যাণ, প্রাপ্তি এবং প্রেরণার স্বপ্ন নিয়ে হাজির হবে। পহেলা বৈশাখকে বরণ করার জন্য চলছে চারদিকে সাজ সাজ রব। দেশজুড়ে এখন উত্সবের প্রস্তুতি। নববর্ষের আয়োজনে ব্যস্ত উত্সবপ্রেমীরা। সব প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। বৈশাখকে স্বাগত জানাতে যেমন নানা আয়োজন তেমনি চৈত্রকে বিদায় জানাতেও বিভিন্ন সংগঠন আজ শনিবার দিনব্যাপী নানা আয়োজন করেছে।
চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
0Share