তাবারক হোসেন আজাদ: রায়পুর উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমী ছাড়া অন্যগুলোতে নিবেদিত প্রাণ, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠকের অভাবে নিস্কৃয় হয়ে পড়েছে। স্থায়ী কার্যালয় ও সরকারী-বেসরকারী
পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ৭টি সংগঠন সক্রিয়তা ফিরে পারে বলে সাংস্কুতিক কর্মী, সংগঠক, সচেতন মহল মনে করছেন।
বিভিন্ন সংগঠনের সংগঠক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমী, সবুজসেনা খেলাঘর, বঙ্গবন্ধু শিল্পগোষ্ঠি, শিশুবন্ধু খেলাঘর, জাসাস, ও আনন্দধারা, রায়পুর থিয়েটারসহ আরো কয়েকটি সংগঠন আছে এবং ছিল।
এসব সংগঠনের দু’একটি ছাড়া অন্যগুলোতে নিজস্ব কার্যালয়, নিবেদিত প্রাণ, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক না থাকায় নিস্কৃয় হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র সরকারী অনুষ্ঠানে শিল্পকলা একাডেমী, শিশু বন্ধু খেলাঘর, সবুজসেনা খেলাঘর ও বঙ্গবন্ধু শিল্পগোষ্ঠি ছাড়া আর কোন সংগঠনকে অংশ গ্রহন করতে দেখা যায় না।
১.শিল্পকলা একাডেমীঃ এটি প্রায় এক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়। যার পরিচালনা ও সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কয়েকজন সরকারী কর্মকর্তা। এটি পরিচালিত হয় সরকারী অর্থায়নে। সপ্তাহের এক দিন উপজেলা পরিষদের ভিতরে শিশু নিকেতন একাডেমী ভবনে একজন সংঙ্গীত শিক্ষক দ্বারা শিশুদের শুধু গান শেখানো হয় ।
২. শিশুবন্ধু খেলাঘর: শিশু বন্ধু খেলাঘর প্রতিষ্ঠিত হয় প্রায় প্রায় ১৫ বছর আগে। এটি পরিচালনা করেন সাংবাদিক প্রদীপ কুমার রায়। এরও কোন স্থায়ী কার্যালয় ও আসবাবপত্র নেই। তবে তিনি সরকারী অনুষ্ঠানে একজন সংঙ্গীত শিক্ষক হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়ে অংশগ্রহন করেন।
৩. বঙ্গবন্ধ শিল্প গোষ্ঠি: এটি প্রায় ১৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়। যার পরিচালনা করেন উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ। এটি নাম মাত্র সরকারী অনুষ্ঠান ছাড়া অংশগ্রহন করেন না এবং এর কোন স্থায়ী কার্যালয়, কর্মী, যন্ত্রপাতি নেই।
৪. সবুজসেনা খেলাঘর: এটি প্রতিষ্ঠিত হয় প্রায় ৩০ বছর আগে। এটি এখন সম্পূর্ণ নিষ্কীয়। এটি পরিচালনা করতেন শিক্ষক ও সাংবাদিক শংকর মজুমদার ও সাংস্কুতিক কর্মী আবুল কাসেম খোকা। এটিরও নেই কোন কার্যালয়, কর্মী, যন্ত্রপাতিসহ আসবাবপত্র।
৫. জাসাস: জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক স্ংস্থা (জাসাস) প্রতিষ্ঠিত হয় প্রায় পনের বছর আগে। এটিও এখন সম্পূর্ন নিষ্কীয়। এটি পরিচালনা করতেন লন্ডন প্রবাসী শাহীন পাটোয়ারী ও দুবাই প্রবাসী মোঃ রাজু আহমেদ। এটি আ’লীগ সরকার ক্ষমতা আসার পরপরই তার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
৬. আনন্দধারা: এটি প্রতিষ্ঠিত হয় প্রায় দশ বছর আগে। যা পরিচালনা করতেন শিক্ষক শিবু প্রসাদ নাথ ও তার স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা সোমা ভৌমিক। এ সংগঠনটি তাদের বাসায় কার্যালয় ও মাচ্চেন্টস একাডেমীতে শিশুদের গান শেখানোর পাশাপাশি সরকারী বেসরকারী অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করেন। তাদের হারমোনিয়ম তবলা ছাড়া অন্য কোন যন্ত্রপাতি নেই।
৭. রায়পুর থিয়েটার: এ সংগঠনটি ২০-২২ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি পরিচালনা করতেন প্রয়াত আব্দুল খালেক পাটোয়ারী ও প্রদীপ কুমার রায়। প্রায় ৩ বছর আগে খালেক পাটোয়ারী মারা যাওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এটিরও নেই কোন কার্যালয় ও আসবাব পত্র।
রায়পুর উপজেলা প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন, শংকর মজুমদার, প্রদীপ কুমার রায়, সোমা ভৌমিক, আবুল কাসেম খোকা, সুবল নাথ, শিল্পী রানী চক্রবর্তী, অমৃতলাল নাথ, মাসুদুর রহমান টিটু, টিটু বড়–য়া, হিমুরা আক্তার মুন্নি। তাদের মধ্যে তিন চার ছাড়া অন্যরা জীবিকার সন্ধানে অন্য অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা পেতে এ জগত ছেড়েছেন।
সংগঠনগুলোর নিষ্কীয়তা প্রসঙ্গে সংগঠক শংকর মজুমদার বলেন, নিবেদিত প্রাণ, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠকের অভাবে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে নিস্কৃতা দেখা দিয়েছে। সরকারী ও বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা, প্রশিক্ষন পেলে ও স্থায়ী কার্যালয় থাকলে জেলার মধ্যে রায়পুরে সাংস্কৃতিক অঙ্গন বড় ভুমিকা রাখতে পারবে।
সংঙ্গীত শিক্ষক প্রদীপ কুমার রায় বলেন, সরকারি নিয়ন্ত্রনে পরিচালিত শিল্পকলা একাডেমী থেকেও কোন নতুন শিল্পি বের হয় না। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই অদক্ষ শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। যারা সত্যিকারের সাংকৃতিকসেবী তাদের কদর উর্ধতন মহলের কাছে হারিয়ে যাওয়ায় গুণী শিল্পী, সংগঠকরা দিনদিন নিরুৎসাহিত হয়ে এ জগত থেকে বিদায় নিচ্ছেন।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আলম বলেন, শিল্পকলা একাডেমীই এখন অধিকাংশ অনুষ্ঠানাদি করে থাকে। অন্য প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আমার খুব জানা নেই। দাওয়াত করলে স্থানীয় কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক অনুষ্ঠানে সহযোগীতা করে থাকেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, রায়পুরে দুটি সিনেমা হল ছিল। চলচিত্রে অশ্লিলতা বেড়ে যাওয়ায় তা সাধারণ মানুষ বর্জন করায় ও দর্শক কমে যাওয়ায় হল বন্ধ হয়ে যায়। বিনোদন পিপাসু সাধারণ মানুষও আজ আনন্দ-বিনোদন থেকে বঞ্চিত। কয়েকটি সংগঠন থাকলেও আজ তাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর দৈন্যদশা। সাংস্কৃতিক সংগঠন বা সংগঠক এগিয়ে আসলে আমি সাধ্যমত সহযোগীতার চেষ্টা করব।
0Share