লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমণী মোহন ইউনিয়নের মেঘনার নদীর চর মেঘা ও কমলনগর উপজেলার কালকিনি ইউনিয়নের চর কাকড়া, চর শামছুদ্দিন লক্ষ্মীপুর জেলার নতুন জেগে উঠা ৩টি চর। দীর্ঘ ৪০ বছর সময়ের মাঝে এ ৩টি চর মেঘনার বুকে জেগে ওঠে। ৩টি চরের আয়তন প্রায় ১২ হাজার একর। এর মধ্যে কমলনগরের চর কাকঁড়া ও চর চর শামছুদ্দিনের আয়তন ৭ হাজার ৪ একর এবং চর মেঘা ও পুরাতন মেঘার আয়তন ৬ হাজার একর।
লক্ষ্মীপুরের নতুন জেগে উঠা এসব চর বিগত ২-৩ বছর ধরে জেগে থাকা ভরা জোয়ারেও আর তলিয়ে যাচ্ছে না। বরং দিন দিন বেড়ে চলছে এর আয়তন।
ভূমি মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা রয়েছে, সাগর ও নদীতে জেগে নতুন চরগুলো বন্দোবস্ত দেওয়া যাবেনা। ফলে ৩টি চরকে লক্ষ্মীপুরের মূল ভূমির মতো উন্নয়ন স্রোতে নিয়ে আসতে হলে সরকারি সুনিদির্ষ্ট পকিল্পনা জরুরী। নতুবা বিপুল পরিমাণ এ ভূমি লক্ষ্মীপুর জেলার জন্য বিভিন্ন কারণে মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে যেতে পারে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি, কমলনগর ও সদর উপজেলার চর রমণী মোহন ইউনিয়ন মেঘনা নদী সংলগ্ন। ইতিমধ্যে মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গণে কমলনগর ও রামগতি উপজেলার প্রায় ৬টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় নদীতে তলিয়ে গেছে। এরই মধ্যে জেগে উঠছে নতুন চর গুলো।
স্থানীয়দের ভাষ্য হচ্ছে, এ চরগুলো ব্যবহার করতে হলে একমাত্র বনায়নের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা জরুরী। তবে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের আন্তরিকতা থাকলে এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করা সম্ভব। স্থানীয়দের দাবি সরকার এখনই পরিকল্পনা করলে এ তিনটি চরে ম্যানগ্রোভ বনায়ন স্থাপনের উদ্যোগ নিতে পারে।
ম্যানগ্রোভ বনায়নের ফলে একদিকে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে অন্য দিকে ভূমি ক্ষয়রোধ কমবে এবং উপকূলীয় এলাকার মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত দূর্যোগের কবল থেকে রক্ষা পেতে পারে। পাশাপাশি দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের চলাকারী মানুষেরা বিনোদনের জন্য নতুন পর্যটন এলাকা পাবে।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন জেলায় জেগে উঠার চর গুলোতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে নোয়াখালী, হাতিয়া, ভোলা, বরিশাল ও পটুয়াখালীসহ জেলায় কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্মীপুর জেলায় এ ধরনের উদ্যোগ এখনো গ্রহণ করা হয়নি।
কমলনগর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো: আফজাল কালাম বলেন,
উপজেলার মেঘনা নদীতে চর কাকঁড়া নামক নতুন একটি ডুবো চর তৈরি হয়। এতে ৭ হাজার ৪ একর ভূমি রয়েছে। এসব ভূমি বর্তমানে জরিপে খাস জমি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলে এই চরে নতুন কিছু করতে পারে। পাশাপাশি চর শামছুদ্দিন ও বনায়নসহ বিভিন্ন প্রকল্পে অর্ন্তভুক্তি করতে পারে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমণী মোহন সহকারী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) জহির উদ্দিন বলেন,
সদরের মেঘনা নদী সংলগ্ন নতুন করে চর মেঘা ও পুরাতন মেঘা মিলে প্রায় ৬ হাজার একর ভূমি রয়েছে। ভূমি মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা থাকায় কাউকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। ফলে খাস ভূমি হিসেবে চরগুলো পড়ে আছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারী কলেজের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব এলাহী সানি বলেন,
আমি সম্প্রতি চর মেঘা ও চর শামছুদ্দিন ঘুরে এসেছি। খুব ভালো লেগেছে। সরকারী যদি এখানে ম্যানগ্রোভ বনায়ন করার উদ্যোগ নেয় তা হলে মানুষের একটি বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় হবে।
লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল বলেন,
আমি লক্ষ্মীপুরে যোগদানের পর চর মেঘা দেখতে চাই। আমার মনে হচ্ছে সাধারণ মানুষ চর মেঘা ঘুরতে যেতে চায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাঠামো, নিরাপত্তা ও দর্শনের কিছু থাকলে তা সম্ভব হবে। বনায়নের মতো এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যায় কিনা তা আমরা ভাবছি।
বৃহত্তম নোয়াখালী অঞ্চলের উপূকলীয় বন বিভাগের (বিভাগীয় বন কর্মকর্তা) বিপুল কৃজ্ঞ দাস জানান,
চর অঞ্চল গুলোতে বনায়ন কর্মসূচি করলে সরকার অর্থনেতিক ভাবে লাভবান হবে। অন্য দিকে নদীর ভাঙ্গণ রোধ হয়। পাশাপাশি বিনোদন ও পর্যটনের ওই সব এলাকা আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। জেগে উঠা চর গুলো বনায়নের উপযোগী কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন – চর মেঘা, চর শামছুদ্দিন, চর কাকড়া এই ৩ টি চর বনায়ন কর্মসূচির আওতায় আনা যায় কিনা আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখবো। আলোচনা করে বন বিভাগ কে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলবো।
0Share