সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর সোমবার , ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
স্থানীয়দের দানে ৭৬ কিমি ভুলুয়া নদীতে খনন শুরু; ২০ বছর পর নদীতে এলো স্রোত

স্থানীয়দের দানে ৭৬ কিমি ভুলুয়া নদীতে খনন শুরু; ২০ বছর পর নদীতে এলো স্রোত

স্থানীয়দের দানে ৭৬ কিমি ভুলুয়া নদীতে খনন শুরু; ২০ বছর পর নদীতে এলো স্রোত

সানা উল্লাহ সানু | লম্বা ৭৬ কিলোমিটার আর ১শ মিটারের বেশি প্রস্থের ভুলুয়া নদীটি লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ জলধারা। কিন্ত গত প্রায় ২০ বছর যাবত এ নদীতে কোন স্রোত নেই। বাঁধ দিয়ে, দখল এবং মাছ ধরার জাল পেতে নদী দখলে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। পানিপ্রবাহ না থাকায় প্রতি বর্ষা মৌসুমে তৈরি হয় দীর্ঘ জলাবদ্ধতা। হাজার হাজার একর জমিতে ফসল ফলাতে পারে না কৃষক। যুগ যুগ ধরে প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করেও ফল মেলেনি। তাই এবার নিজেদের সামান্য দান অনুদানে ৭৬ কিলোমিটার ভুলুয়া নদী খনন শুরু করেছে স্থানীয়রা। 

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের আজাদনগর স্টীল ব্রিজ এলাকা থেকে খনন কার্যক্রম শুরু করা হয়। মাদরাসা শিক্ষক মুফতি নুরুল্লাহ খালেদ, মুফতি মোঃ শরীফুল ইসলাম, মাওলানা কামাল উদ্দিন তাহেরি, কৃষক মিজানুর রহমান পিংকু, সমাজসেবক জাহাঙ্গীর আলম ও সোহেল ভুইঁয়ার উদ্যোগে গত ২৪ জুলাই এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। 

শনিবার (২ আগষ্ট) লক্ষ্মীপুর জেলা শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের আজাদনগর স্টীল ব্রিজ এলাকা গিয়ে দেখা গেছে ২টি স্কেভেটর মেশিন ভুলুয়া নদী থেকে মাটি কেটে ওপরে তোলা হচ্ছে। এসময় নদীতে তীব্রস্রোত দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা শাহাব উদ্দিন বলেন, গত প্রায় ২০ বছর পর এ প্রথম ভুলুয়া নদীতে স্রোত দেখলাম। এতে খুবই খুশি লাগছে। এর আগে সর্বশেষ ২০০৬-২০০৭ সালের দিকে ভুলুয়ায় স্রোত ছিল। 

এসময় ভুলুয়া নদী খননের একজন উদ্যোক্তা ও মাদরাসা শিক্ষক মুফতি শরীফুল ইসলাম জানান, ২ আগষ্ট পর্যন্ত ৯দিনে প্রায় ২ কিলোমিটার নদীর এক দিকে খনন করা হয়। এতেই নদীতে তীব্র সোত তৈরি হয়েছে। তিনি আরো জানান, যদি এ বর্ষায় মাত্র ৪ কিলোমিটার নদী খনন করা যায়, তাতে এ বছর আর জলাবদ্ধতা থাকবে না। খনন কাজে স্থানীয় মানুষ সামান্য অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছে। বিভিন্ন এলাকাবাসী তাদের স্থানীয় বাজার, মসজিদ, মাদরাসা থেকে দান অনুদান তুলে নদী খননে সহায়তা করছে। তবে অনেক টাকার প্রয়োজন বলে জানান, মুফতি শরীফুল ইসলাম। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৭৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১০০ মিটারের বেশি প্রস্থের ভুলুয়া নদী দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা এবং নোয়াখালী জেলার সদর উপজেলা ও সুবর্ণচর উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। এসময় এ নদী লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার ২০টি ইউনিয়নকে সংযুক্ত করেছে। 

নদীটি এ অঞ্চলের কৃষি , মৎস্য আহরণ ও অন্যান্য কাজে গুরুত্বপূর্ণ হলেও বর্তমানে তা এলাকাবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দখলদারির কারণে পলি জমে মরে গেছে। সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে এলাকার রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। নদীটি খনন করতে স্থানীয়রা বহুবার আন্দোলন করে এলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছে। 

কৃষক মিজানুর রহমান পিংকু বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাস মারাত্মক জলাবদ্ধতায় পড়ে এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। প্রায় লাখ একর জমিতে কোন ফসল হয়নি। বারবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী জেলা প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি । তাই এলাকাবাসী নিজেরাই এবার উদ্যোগী হয়ে নদীটি খনন শুরু করেছে। 

মাদরাসা শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অল্প খনেনই নদীতে স্রোত তৈরি হয়েছে। এরকম স্রোত থাকলে আগামী একসপ্তাহের মধ্যে ভুলুয়ার পানি কমে যাবে। নদী খনন করা হলে জলাবদ্ধতা কমবে, জমিতে আমন ফসল ফলানো যাবে। 

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, চলতি বর্ষা শুরুর আগেই ভুলুয়া নদী খনন করতে মানববন্ধন শেষে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। 

এর আগে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভুলুয়া নদী থেকে সকল অবৈধ বাঁধা অপসারণ করে নদীটি খনন করে রামগতি-কমলনগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হাইকোর্টে একটি রিটপিটিশন দাখিল করেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহাব উদ্দিন, রাকিব হোসেন ও মিজান বলেন, এত কিছুর পরেও প্রশাসন কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ভুলুয়া নদীতে অন্তত জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জাল পেতে কিংবা পানি আটকিয়ে মাছ ধরা বন্ধের জন্য প্রশাসন লিখিত নোটিশ দিতে পারে। এতে তো কোন টাকা পয়সা খরচ হবে না। প্রশাসন সেটাও করেনি। এখন একদিকে অগভীর নদী, অন্যদিকে শতশত মাছ ধরার ফাঁদ পেতে পানি প্রবাহ আটকে দিচ্ছে। কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছে না। মানুষ বাসাবাড়িতে বসবাস করতে পারছে না। 

তাই সকল চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর চলতি বর্ষায় এলাকার কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, সমাজসেবক এবং স্থানীয়রা মিলে ৭৬ কিলোমিটার নদীর বিশেষ কিছু অংশ খনন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য দুটি এক্সেভেটর দিয়ে খনন শুরু করা হয়। পাশাপাশি স্থানীয়দের উদ্যোগে মাছ ধরার ফাঁদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। স্থানীয় সাহাব উদ্দিন বলেন, সবকিছুর উর্ধ্বে আমরা বাঁচতে চাই। 

মুফতি শরীফুল ইসলাম বলেন, সরকারের আশায় পড়ে থাকলে এ অঞ্চলটি শেষ হয়ে যাবে। তাই এবার আমরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছি। তবে আমরা প্রত্যাশা করবো পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলা প্রশাসক আমাদেরকে যন্ত্রপাতি ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করবে। 

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ ইমতিয়াজ মাহমুদ বলেন, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ভুলুয়া নদী খননের জন্য যৌথবাবে একটি সমীক্ষা চলছে। আশা করি খুব শীঘ্রই কাজ হবে। অন্যদিকে এলাকাবাসীর নিজস্ব  উদ্যোগে নদী খননের কথা আমাদেরকে জানিয়েছে। আমরাও তাদেরকে বলেছি আমরা যতটুকু পারি সাধ্যমতো সহযোগিতা করবো। সব কিছুর আগে মানুষ ও ফসল বাঁচতে হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা। 

লক্ষ্মীপুর সদর ও নোয়াখালী সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ পানি এসে ভুলুয়ার মধ্যভাবে একত্রিত হয়। কিন্ত ভুলুয়ার দক্ষিণ প্রান্তে নাব্যতা না থাকায় এবং নদীতে বাঁধা থাকায় দূরদূরান্তের সে পানি দুঃখ হয়ে রয়ে যায়। ভুলুয়া পাড়ে দেখা দেয় দীর্ঘ জলাবদ্ধতা। 

প্রকৃতি | পরিবেশ আরও সংবাদ

স্থানীয়দের দানে ৭৬ কিমি ভুলুয়া নদীতে খনন শুরু; ২০ বছর পর নদীতে এলো স্রোত

লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কে মাথার ওপর ঝুঁকিপূর্ণ গাছ ঘিরে আতঙ্ক, বনবিভাগের খোঁজ নেই

টানা বৃষ্টি ও জোয়ারে রামগতি-কমলনগরে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

রামগতিতে ৪ ইটভাটা মালিককে সাড়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা

ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুরও ভরাট করা যাবে না

কমলনগরে বন্ধ অবৈধ ইটভাটা চালু করায় প্রতিবাদে মানববন্ধন 

Lakshmipur24 | লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়ে নিবন্ধিত নিউজপোর্টাল  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2025
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Muktizudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com