দেশে করোনা দুর্যোগ দেখা দেয়ার পর সংক্রমণ এড়াতে অনেকেই পুরোপুরি বাসা বাড়িতে বা হোম কোয়ারেনটাইনে চলে গেছেন। পাড়া প্রতিবেশী তো দূরে থাক আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবের কথাও পুরোপুরি ভুলে গেছেন কেউ কেউ। কিন্ত লক্ষ্মীপুরের কিছু সাহসী যুবক ও তরুণ নিজদেরকে স্বেচ্ছাসেবি করোনা যোদ্ধা ঘোষণা দিয়ে নেমে পড়েছিলেন করোনা যোদ্ধে। এ যুদ্ধে পরাজিত হলে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তারা পিছপা হয়নি।
সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে করোনা থেকে মানুষকে বাচাঁতে মাঠে গিয়ে সচেতন করেছে তারা। হাজার হাজার মানুষকে খাবার দিয়েছে, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা সামগ্রী দিয়েছেন।
আবার করোনা আক্রান্ত হয়ে বা উপসর্গ নিয়ে কোন লোক মারা যাওয়ার পর যখন ওই ব্যক্তির পরিজন দূরে সরে যাচ্ছে তখন, রীতিমতো বিষ্ময়কর ভাবে কবর দেয়া বা সৎকারের মতো কাজে এগিয়ে আসে লক্ষ্মীপুরের হাতে গোনা সে কয়েকটি সংগঠন।
এখন প্রতিদিনই তার বিপদজন লাশ দাফন করেছে এবং দাফন করার অনুরোধ কল পাচ্ছে।
করোনাকালে লক্ষ্মীপুরের যুবক ও তরুণদের দ্বারা পরিচালিত সামাজিক সংগঠনগুলোর মধ্যে যেগুলোর কাজ লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশে প্রশংসা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে এমন সংগঠনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: সবুজ বাংলাদেশ, স্বপ্ন নিয়ে, লক্ষ্মীতারুণ্য, আমরা রায়পুর, সেবা টীম দালাল বাজার, নন্দন ফাউন্ডেশন, হেলপিং হ্যান্ড বাংলাদেশ ।
এ সংগঠনগুলোর কাজ নিয়ে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করেছে। আজ ২য় পর্বে তুলে ধরা হয়েছে লক্ষ্মীপুর সরকারী কলেজের ছাত্র ইসমাইল হোসেন বাবু পরিচালিত “সবুজ বাংলাদেশ’’ এর কার্যক্রমের সবিস্তার।
করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ কবর দিচ্ছে, ‘‘সবুজ বাংলাদেশ’’
মৃত মুসলিমদের নামাজে জানাজাসহ কবর দেয়া হচ্ছে। আছে হিন্দুদের সৎকারের যাবতীয় ব্যবস্থা। ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারের অনুমোতি নিয়ে এ কাজ করে যাচ্ছে সবুজ বাংলাদেশ। আর লক্ষ্মীপুরের সবগুলো লাশ দাফনের সময় সেচ্ছাসেবক টিমকে নিরাপত্তা সামগ্রী দিয়ে সহযোগীতা করেছেন, লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী।
বাবার লাশ ঘরের এক রুমে আবদ্ধ রেখে ছেলে খবর দিলেন সবুজ বাংলাদেশকে। মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে এগিয়ে এলো সবুজ বাংলাদেশ। এটি ছিল তাদের প্রথম লাশ দাফন। ৫ জুন পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়ালো চারে। প্রতিনিয়তই কল আসছে তাদের টীমের নাম্বারে।স্বেচ্ছাসেবক টীমে রয়েছে পুরুষ সদস্যের পাশাপাশি ৩জন নারী সদস্যও। আর স্বেচ্ছাসেবিরাও এ বীরের সম্মানী কাজ করতে পেরে উজ্জীবিত। শুধু লাশ দাফনেই সীমাবদ্ধ নয়। করোনাকালীন সময়ে সবুজ বাংলাদেশ করেছে আরো নানা সামাজিক কাজ।
৯শ পরিবারে এক সপ্তাহের বাজার, রান্না করা খাবার এবং অন্যান্য সামগ্রী দিয়েছে এ সংগঠন। এছাড়া কৃষকের ধান কাটা, গৃহহীনের ঘর করে দেয়া, শিশু খাদ্য প্রদান, দুস্থ প্রবাসীদের কে ও নগদ সহায়তা দিয়েছে। সবুজ বাংলাদেশ ফুড ব্যাংকের আওতায় একই কার্যক্রম চলছে দেশের ২৫ জেলায়।
সবুজ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মীপুরের যুবক ইসমাইল হোসেন বাবু। যুবকটির বয়সের কোটা এখনো ৩০ পার হয়নি। পড়ছেন লক্ষ্মীপুর সরকারী কলেজে স্নাতকোত্তর পর্বে। কিন্ত এ বয়সেই প্রতিষ্ঠান করেছেন এ স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন। যার সাহায্যে দেশের হাজার হাজার মানুষকে করছেন নানা সহায়তা। লাল সবুজের পতাকার দেশের এ সংগঠনের নাম “সবুজ বাংলাদেশ”।
ইতোমধ্যে সারাদেশের ২৯ জেলায় গঠিত হয়েছে সবুজ বাংলাদেশের কমিটি। বর্তমানে সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী কর্মী ২ হাজার ৭শ। পরিবেশ নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে আজ থেকে ৪ বছর আগে এ সংগঠনের জন্ম। পরিবেশ নিয়ে প্রশংসনীয় কাজের কারণে ৩ বছর না যেতে স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের জাতীয় পরিবেশ পদক।
সবুজ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাবু জানান, পরিবেশ সম্মত কৃষি সমৃদ্ধ এবং যুব উন্নয়ন ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সবুজ বাংলাদেশের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ২৫ জেলায় কার্যক্রম চলছে। আমরা শুধু বাহিরের পরিবেশ না, আমাদের কাজে মানুষের মনের পরিবেশটাও সুন্দর করতে চাই। সেজন্য সবার দোয়া চাই।
আরো পড়ুন: ২৭শ পরিবারে খাদ্য দিয়েছে “স্বপ্ন নিয়ে”
0Share