শাহাদা আক্তার শাহিদা (২৯) । কৃষক পরিবারে জন্ম তার। পরিবারে আর্থিক অবস্থা মোটেই ভালো ছিলো না। তার বাবা ছিলেন একজন গ্রাম পুলিশ ও কৃষক। ফলে পরিবারের টাকায় লেখাপাড়া চালানোর কোন উপায় ছিলো না। নিজের প্রচেষ্টায় বিএসএস পাশ করেছেন। লেখাপাড়া চলাকালীন সময়ে ২০০৯ সালে সাতশ টাকা বেতনে একটি এনজিওতে কাজ শুরু করেন।
সেখানে নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা করা, কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে উঠান বৈঠকের আয়োজন করতেন তিনি। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত একটি এনজিওতে কাজ করেন। ২০১৭ সালে ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক ভিত্তিক ইউনাইটেড পারপাস কারিতাস বাংলাদেশ এনজিওতে কাজ করেছেন। বর্তমানের তিনি কমলনগর উপজেলা যুব মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
শাহিদা ২০১৩ সাল থেকে নিজ এলাকায় অসহায় নারীদের সাহায্যে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নারী নির্যাতন, যৌতুক, বাল্য বিবাহ নিরোধ নিয়ে কাজ করেন তিনি। বর্তমানের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের মাধ্যমে তাদের সচেতন করার কাজ করেন শাহিদা। সাহিদা আজ একজন সফল নারী। তিনি একজন সমাজসেবকও।
সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় তাকে সম্মাননা ও ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস ২০২১ উৎযাপন উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের পক্ষ থেকে তাকে জয়িতা হিসেবে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন আকন্দসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তিনি এ সম্মাননা গ্রহণ করেন। সহিদার বাড়ির লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার দক্ষিণ চর মার্টিন গ্রামে। তারা পিতার নাম ফয়েক আহম্মদ। জীবনে সফলতা অর্জনকারী এ নারী বর্তমান অবস্থানে আসতে হয়েছে নানা বাধা পেরিয়ে। সহিদা বলেন, অভাবের সংসারে লেখাপাড়া করাটা খুব কঠিন ছিলো। পরিবারের পক্ষ থেকে আমাকে বহুকষ্টে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করার সহযোগীতা করা হলেও পরবর্তীতে আর সহযোগীতা করার মতো অবস্থা ছিলো না। আমি নিন্ম বেতনে একটি এনজিওতে চাকরী নিয়ে নিজের লেখাপড়া চালিয়ে আজ এ পর্যন্ত এসেছি। নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। সমাজের নারী ও কিশোর-কিশোরীদের সচেতনসহ নানা বিষয় নিয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে আমার এ কাজ অব্যাহত থাকবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরই আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাজিয়া পারভীন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি মেহের নিগার, জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম পাটওয়ারী প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে শিক্ষা চাকরি সফলতা, সফল জননী, অর্থনৈতিকভাবে সফলতা, সমাজ উন্নয়নে অবদান, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন জীবনে সফলতাসহ ৫ টি ইভেন্টে মোট ১০ জন জয়িতাকে সম্মাননা হিসেবে ক্রেস্ট ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
337Share