জিল্লুর রহমান: জেলা পর্যায়ে একটি অনলাইন গনমাধ্যম হিসেবে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর ফেসবুকে ৫০ হাজার ফলোয়ারের মাইল ফলক অতিক্রম করেছে। একজন সংবাদ কর্মী হিসেবে বলতে পারি এই অনলাইন নিউজ পোর্টালটি বাংলাদেশে মফস্বল সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারি অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বাংলাদেশের অন্য কোন জেলায় এই ধরনের শক্তিশালী, বস্তুনিষ্ঠ আঞ্চলিক নিউজ পোর্টাল তথ্যসেবা দিচ্ছে বলে আমার নজরে পড়েনি। মফস্বল সাংবাদিকতা খুব একটা সহজ বিষয় নয়। যে সাংবাদিকতা আজো সংবাদ তথা গণমাধ্যমের প্রাণ শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছে, তা হলো মফস্বল সাংবাদিকতা।
কিন্তু এই গৌরবোজ্জ্বল মফস্বল সাংবাদিকতার মাঝেই যেন ভূত লুকিয়ে আছে, প্রচলিত কথায় যাকে বলে সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে থাকা। আমরা অনেকেই হলুদ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে কথা বলি। বলি সুস্থ্যধারার সাংবাদিকতার উৎকর্ষের কথা। প্রত্যেকটা পেশাতেই একটি নির্দিষ্ট পেশাগত ন্যূনতম যোগ্যতার মাপকাঠি কোন সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান দ্বারা নির্ধারিত থাকে।
কিন্তু সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেই এ ধরণের কোন মাপকাঠি এখনো নির্ধারিত হয় নি। আমার মতে, একজন সাংবাদিক কে হতে হবে দক্ষ, প্রজ্ঞা আর মেধা সম্পন্ন মানুষ। কিন্তু মফস্বল সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই এটির সম্মিলন ঘটে না। এর উপযুক্ত কারণও আছে, কারণ প্রত্যেকটি পেশাজীবিই চায়, তার পেশার উৎসেই পূর্ণ সময় ব্যয়ের মাধ্যমে নিজ ও পরিবারের অর্থনৈতিক চাহিদার সম্বনয় ঘটাতে।
অন্যদিকে মফশ্বল সাংবাদিকতায় রয়েছে ঝুঁকিও, তারা কতটুকু কষ্ট, ঝুঁকি নিয়ে সংবাদগুলো সংগ্রহ করছে, কতটা সময় ব্যয় করে একটা প্রতিবেদন তৈরি করছে, সে খবরই বা আমরা ক-জন রাখি? অনেক ক্ষেত্রেই সংবাদের পেছনে ছুটতে গিয়ে সন্তান-পরিবার-পরিজনকেও ঠিকভাবে সময় দিতে পারেন না।
কিছুটা যেন অন্তহীন দৌড়! কখনো সংবাদ প্রকাশের কারণে আইনী জটিলতায় পড়ে আদালতের কাঠগড়ায়, কখনো স্থানীয় প্রভাবশালীর শিকার হয়ে আহত শরীর নিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করা। এ সবই মফস্বল সাংবাদিকদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার সারাংশ।
তবুও নেই সাহায্যের হাত বাড়ানোর মানুষ, নেই আইনী লড়াইয়ের সক্ষমতা। কিন্তু অনেকেই এসকল ঝামেলায় না জড়িয়ে উল্টো পথে যাত্রা করেন, যাদের অনেক সাংবাদিককেই স্থানীয়রা সাংবাদিক এর বদলে সাংঘাতিক বলে আখ্যায়িত করে। স্থানীয়দের মতে, সাংবাদিকতা মানে ধান্ধাবাজি করা। আর তাই এসকল মফস্বল সাংবাদিকের ক্ষেত্রে এধরণের ঝামেলা তো ঘটেই না, বরং স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সাংবাদিক পরিচয়ের বদৌলতে জুটে জামাই আদর।
সবই যেন ভূতের কারসাজি! এখন সময় এসেছে গণমাধ্যম কর্মী ও কাজের গুণগত উন্নয়নের। আর এই অন্ধকারকে ঢাকতে বিশ্বব্যাপীই এজন্য নতুন রং সৃষ্টির তোড়জোড় সৃষ্টি হয়েছে। যাকে পশ্চিমা বিশ্ব ডাকতে শুরু করেছে গ্রিণ জার্নালিজম বা সবুজ সাংবাদিকতা। সর্বোপরি প্রয়োজন মফস্বল পর্যায়ে যোগ্য ও শিক্ষিত সাংবাদিক তৈরির সৃজনশীল উদ্যোগ, পাশাপাশি এ পেশায় কর্মরতদের আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে মফস্বল পর্যায়ে পেশাগত গণমাধ্যম কর্মী সৃষ্টির পথ সহজতর করা।
এক্ষেত্রে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর অগ্রনী ভুমিকা পালন করছে এবং ভবিষ্যতে তা অব্যাহত রাখবে বলেই আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। গত কয়েক বছরের পর্যবেক্ষনে বলতে পারি, লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর সকল ধরনের অপেশাদারিত্ব মনোভাব থেকে বিরত ছিলো। একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যম হিসেবে বলতে গেলে একাই এগিয়ে চলছে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর।এই জন্য এই সংবাদ মাধ্যমটির প্রাণপুরুষ সানাউল্লাহ সানু ভাইয়ের কাছে আমরা লক্ষ্মীপুরবাসি কৃতজ্ঞ। লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর মফস্বল পর্যায়ে পেশাদারিত্বের সাংবাদিকতা সৃষ্টির মাধ্যমে আরো একটি যুগান্তকারি মাইল ফলক অতিক্রম করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
লেখক: সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী,ঢাকা।
0Share