বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আলোচকবৃন্দ বলেন, কোভিড-১৯: মহামারী মোকাবেলায় কমিউনিটি রেডিওগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ বছর বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ভয়-ভীতি ও প্রভাব বিহীন সাংবাদিকতা’ (জার্নালিজম উইদাউট ফিয়ার এ্যন্ড ফেবার)।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) সম্প্রচাররত ১৭টি কমিউনিটি রেডিও স্টেশনের সাথে যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব মুক্ত পালন করেছে।
এ বছরের বিএনএনআরসির প্রতিপাদ্য ছিলো “কোভিড ১৯: সংকটকালীন কমিউনিটি মিডিয়ার অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতকরণে চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয়’ বিষয়ক একটি আলোচনা অনুষ্ঠান।
মোট ৫১ জন অলোচক এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, জেলা তথ্য কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিক, এনজিওর নির্বাহী পরিচালক, এ্যাডভোকেট, কমিউনিটি রেডিওর প্রধান নির্বাহী, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদ (বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সরকারি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, সরকারি বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক) উপস্থিত ছিলেন।
এই আলোচনার উদ্দেশ্য ছিলো করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কমিউনিটি মিডিয়া তথা কমিউনিটি রেডিও ও স্থানীয় গণমাধ্যমের অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতকরণে চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বিত সহযোগিতা।
আলোচকবৃন্দ বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমিয়ে আনার জন্য গ্রামীণ জনগণকে এই মহামারীর ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত ও সচেতন করা, নাগরিক সমাজের সংগঠনসমূহ, সরকার, স্বাস্থ্য কর্মীদের এবং জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ ; জনগণের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখা এবং স্থানীয় বাজার, নাগরিক সমাজের সংগঠন এবং সরকারে মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে কমিউনিটি রেডিওগুলো এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
আলোচকবৃন্দ কমিউনিটি রেডিওর সম্প্রচার অব্যাহত রাখার জন্য এই সংকটকালীন সময়ে সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন এবং প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানান এবং নিম্নলিখিত প্রস্তাবসমূহ তুলে ধরেন:
১. জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে কমিউনিটি রেডিওর সম্প্রচার সময় ক্রয় করে কভিড-১৯ বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করা। কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচার এলাকায় ইন্টারনেটের গতি বাড়ানো। সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং মোবাইল ফোনের সংযোগ শক্তিশালী করা।
২. করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যে সমস্ত স্পন্সরকারী ও দাতা সংস্থা বা সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহ কাজ করছে তাদের স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রমে সহায়ক মাধ্যম হিসেবে কমিউনিটি রেডিওকে প্রাধান্য দেয়া বা বিবেচনায় রাখা ।
৩. কমিউনিটি রেডিও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে কারিগরি ও জরুরী আর্থিক সহযোগিতা প্রদান।
৪. স্থানীয় পর্যায়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি-এর কার্যক্রম সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি রেডিও’র সম্প্রচারকারীদের ফোনে বা অনলাইনে কমিটির প্রতিনিধিগণ যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাক্ষাৎকার প্রদান করেন সে ব্যাপারে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো।
৫. কমিউনিটি রেডিও স্টেশনগুলোর সম্প্রচার অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)-এর সামাজিক দায়বদ্ধতা ফান্ড (সোশ্যাল অবলিগেটরি ফান্ড) থেকে জরুরি আর্থিক অনুদানের জন্য সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছে।
বিটিআরসি ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে মোবাইল অপারেটরদের আয়ের শতকরা ১ ভাগ অর্থ দিয়ে এই ফান্ড গঠন করেছে গ্রামীণ জনগণকে যাঁরা এখনো মোবাইল নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত নন তাঁদের সংযুক্ত করার জন্য।
কমিউনিটি রেডিও স্টেশনগুলো গ্রামীণ জনগণকে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের মাঝে এক সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। বিটিআরসি-এর এই সোশ্যাল অবলিগেটরি ফান্ড টেলিকম অপারেটরদের অবদানের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই ফান্ডের অর্থের পরিমাণ দাাঁড়িয়েছে এক হাজার চারশত বাইশ কোটি নব্বই লক্ষ টাকা (১,৪২২.৯০)।
বর্তমানে কোভিড-১৯-এর প্রার্দুভাব মোকাবেলায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে অব্যাহতভাবে কাজ করছে দেশের কমিউনিটি রেডিওগুলো।
বর্তমানে চলমান ১৭টি কমিউনিটি রেডিও সম্মিলিতভাবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮৫ ঘন্টা বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। স্থানীয় পর্যায়ে করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্যসহ বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা, এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে কমিউনিটি রেডিওগুলো করোনা ভাইরাস প্রতিরোধমূলক রেডিও অনুষ্ঠান নির্মাণ ও সম্প্রচার করছে।
রেডিও’তে সম্প্রচারিত হওয়ার পাশাপাশি স্টেশনগুলো তাদের সামাজিক মাধ্যমেও (ফেসবুক এবং ইউটিউব চ্যানেল) করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ বিষয়ক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। ১৭টি কমিউনিটি রেডিওতে প্রায় ৮০০ জন সম্প্রচারকারী অনুষ্ঠান তৈরি ও সম্প্রচারে সম্পৃক্ত ছিলো এখন লকডাউনের কারণে এখন ২০০ জন যুব ও যুব নারী এই প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন।
0Share