সানা উল্লাহ সানুঃ মুক্তজ্ঞান প্রসারে নিরব বাতিঘরে পরিণত হয়েছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা সদরের গণ উন্নয়ন গ্রন্থাগারটি। আসম রব সরকারি কলেজের সামনের এ প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন শত পাঠক নিরবেই জ্ঞান নিচ্ছেন। ফলে এটি এখন হয়ে ওঠেছে এ এলাকার মুক্তজ্ঞানের এক নিরব বাতিঘর রুপে। অন্যদিকে গ্রন্থগারটি এখন শুধু মুক্তজ্ঞান বিতরণের জায়গাই না বরঞ্চ এ অঞ্চলের শিক্ষিত মানুষের আড্ডার জায়গাও বটে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ, বিজ্ঞান, ধর্ম সহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় ৪ হাজার বই এবং ৫১১ জন নিয়মিত সদস্য নিয়ে গঠে ওঠা জ্ঞানের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ন স্থানীয় ভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। পরিচালনার জন্য রয়েছে বিনা বেতনের একজন সমন্বয়ক ও ৯ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পরিষদ।
গ্রন্থাগারের সমন্বয়ক মোঃ নাসিম উদ্দিন জানান, “জ্ঞান হোক গণ সচেতনাতা বিকাশের হাতিয়ার” এ শ্লোগান নিয়ে শিক্ষা ও আর্থসামাজিক পশ্চাৎ পদ রামগতি উপজেলায় পাঠভ্যাস গড়ে তোলা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে স্থানীয় কয়েকজন জ্ঞানের সাধক গড়ে তোলেন এ গ্রন্থাগার। সে থেকে ২০১৭ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৬ বছর অতিবাহিত করছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছরের (২০১৬) এপ্রিল মাসে গণগ্রন্থাগারটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অধীন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র কর্তৃক নিবন্ধিত হয় (নং-৬৮)। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও তাদের গ্রন্থাগারটির আর্থিক সচ্ছলতা আসেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও গণ উন্নয়ন গ্রন্থাগারটি স্থাপিত হওয়ায় এলাকার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, সাংবাদিক সহ সমাজের সর্বস্থরের জনসাধারন গ্রন্থাগারে এসে দৈনিক পত্রিকা, সাময়িকী, কারেন্ট ওর্য়াল্ড, চাকুরীর খবর সহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করছেন নিয়মিত। গ্রন্থাগারের রেজিষ্টার খাতা থেকে জানা যায় এখানে প্রতিদিন গড়ে ১০০-১৫০জন পাঠক লাইব্রেরী সেবা গ্রহন করছেন।
গ্রন্থাগারের সমন্বয়ক নাসিম উদ্দিন জানান, শিশুদের পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে গ্রন্থাগারে শিশু কিশোরদের জন্য আলাদা কর্ণার রাখা হয়েছে। সেখানে রয়েছে প্রচুর শিশুতোষ বই। নারী কর্নার নামেও রয়েছে আলাদা জায়গা। সেখানেও রয়েছে নারী বিষয়ক বই।
গ্রন্থাগারের সমন্বয়ক আরো জানান গণউন্নয়ন গ্রন্থাগার লাইব্রেরী সেবার পাশাপাশি তথ্য সেবামূলক কর্মকান্ড ও করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই লাইব্রেরীকে একটি তথ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
গ্রন্থাগ্রারের নিয়মিত পাঠক কলেজ ছাত্র সবুজ জানান, শুধু বইপড়ার মাঝেই সীমাদ্ধ নেই স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যুব ফোরাম ও শিশু ফোরাম সংগঠন করা হয়েছে। যার উদ্দেশ্য ছাত্র, ছাত্রীদেরকে লাইব্রেরী মুখি করা।
গ্রন্থাগ্রারের নিয়মিত আরেকজন পাঠক অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা জসিম মিয়া জানান, বই পড়া কর্মসূচীর পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন, নজরুল ও রবিন্দ্র জয়ন্তি উদযাপন, পাঠচক্রের আয়োজন, শীতার্তদের সাহায্যে শীত বস্ত্র সংগহ্র ও বিতরন, পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বৃক্ষ রোপন অভিযান কর্মসূচীও পালন করছে এ গ্রন্থাগার।
প্রতিদিন শত পাঠকের জ্ঞানের তৃষ্ণা নিবরন হলেও আর্থিক দিনতা গ্রন্থাগারটির প্রধান সমস্যা। তাই গ্রন্থাগারের সমন্বয়কারী নাসিম এলাকার সৃজনশীল মেধা বিকাশে এ গ্রন্থাগারের উন্নয়নে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
0Share