নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুর জেলার ৫টি উপজেলার ১ হাজার ৪১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৬০টিতেই নেই শহীদ মিনার। রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রায় ৬৪৭ বছর হলেও প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। জেলার ৫টিউপজেলার ৭৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৭৮টি মাধ্যমিক ও ১৩৩টি মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে ১৭৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪০টিতেই শহীদ মিনার নেই। আর ৭৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭২০টিতেই নেই শহীদ মিনার। অন্যদিকে ১৩৩টি মাদ্রাসার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই নেই কোনো শহীদ মিনার। এখানকার হাজারো শিক্ষার্থী ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নিজেরাই অস্থায়ীভাবে কলাগাছ ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে আসছে।
গত বছর মিডিয়ায় লেখালেখির পর কমলনগরের একটি পুরাতন শহীদ মিনার সংস্কারের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। এদিকে অযত্ন আর অবহেলায় সদর উপজেলার পিয়ারাপুরে একটি শহীদ মিনার দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
কমলনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান জানান, উপজেলার সরকারি-বেসরকারি ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনোটিতেই শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা অস্থায়ী শহীদ মিনারে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে।
রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চরবংশী এসএম আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসলেহ উদ্দিন জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের আশপাশের চার-পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো শহীদ মিনার নেই। প্রতি বছর ২০ ফেব্রুয়ারি কলাগাছ দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে শহীদ মিনার তৈরি করে পরদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে পুষ্পমাল্য অর্পণ করি।
জেলা শিক্ষা ভবন কার্যালয় ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে পাওয়া তথ্য মতে. লক্ষ্মীপুর জেলায় সরকারি প্রাক প্রাথমিক ও সরকারি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে ৭৩১টি, মাধ্যমিক ও নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৭৮টি, মাদ্রাসা ১৩৩টি, কারীগরী ও কলেজ ২৮টিসহ মোট ১০৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কি পরিমান প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে তার কোন তথ্য জানাতে পারেনি জেলা শিক্ষা অফিসার। তবে স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।
এখানকার শিক্ষার্থীরা জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আসলে তারা বাঁশের কঞ্চি কিংবা কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরী করে দিবসটি পালন করেন। কেউ কেউ বলেন, ভাষার মাস আসলেই সাংবাদিকরা তাদের বিদ্যালয়ে ছুটে যান, এভাবে বছরের পর বছর যায় তবুও শহীদ মিনার নির্মাণ হয়না। এতে করে ভাষা শহীদদের প্রতি অনেকে সম্মান জানাতে পারেনা বলে জানান। একই কথা জানিয়ে ওই বিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপনের দাবী জানান শিক্ষকরা।
0Share