সানা উল্লাহ সানুঃ বিশাল আকৃতির কাঠ গাছ। অল্প দিনেই বেড়ে ওঠে প্রচুর ডালপালা নিয়ে। তাই সরকারি বা ব্যক্তিগত ভাবে এ গাছটি লক্ষ্মীপুরের সর্বত্রই দেখা যায়। স্থানীয়রা বলে কালো কড়ই। কিন্তু দেশব্যাপী পরিচিত রেইনট্রি কড়ই নামে। সে কালো রেইনট্রি কড়ই গাছটি এখন লক্ষ্মীপুর জেলাবাসির জন্য নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ প্রাপ্তি ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুক্তভোগী এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বললে এমনই তথ্য ওঠে এসেছে।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, মার্চ থেকে অক্টোবর এ আট মাস লক্ষ্মীপুরবাসিকে নানা ধরনের দূর্যোগের শিকার হতে হয়। কিন্তু দূর্যোগে শত রকমের হাজারো ক্ষতি হলেও সেগুলো নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না, যতটুকু এ সময়ের বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে হয়। এরমধ্যে কোন কোন বিদ্যুৎ ব্যবহারকারি মার্চ থেকে জুলাই মাসকে বিদ্যুতের ব্যবহারের জন্য দূর্ভোগের মাস হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কারণ হিসেবে তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এ সময় সামান্য বা ভারী ঝড়োবাতাস এবং বৃষ্টিপাতের কারণ দেখিয়ে প্রায় প্রতিদিনই লেগে থাকে বিদ্যুৎবিপর্যয়। অপর দিকে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনের বক্তব্য হচ্ছে, এ সময় বিদ্যুৎ সঞ্চালনে প্রায়দিন বিপর্যয় ঘটে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপী নিরাপদে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের অন্যতম বাঁধা হচ্ছে বিদ্যুৎ লাইনের পাশে অপরিকল্পিত গাছ বিশেষ করে রেইনট্রি-কড়ই গাছ।
বিদ্যুতের লাইনম্যান এবং সরেজমিনে জানা যায়, চৌমুহনী থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত ৪০ কিমি সড়ক এবং হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পাশেই রয়েছে বনবিভাগের লাগানো হাজারো রেইনট্রি-কড়ই গাছ। তবে সম্প্রতি সে গাছ গুলো সড়ক নির্মাণের জন্য কাটা হয়েছে। সামান্য ঝড়োবাতাসে এ রেইনট্রি-কড়ই গাছের ডালা পালা সহজেই বিদ্যুৎ লাইনের ওপর ভেঙে পড়ে। অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরের বেশির ভাগ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পাশেই আছে বনবিভাগ বা ব্যক্তি মালিকানায় লাগানো রেইট্রি-কড়ই গাছ। যেগুলো দূর্যোগকালীন সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অন্যতম বাঁধা।
বিদ্যুৎ বিভাগের বক্তব্যের সত্যতা পায় পাওয়া যায় এভাবে, বৃস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) ভোর রাতের কালবৈশাখি ঝড়ের পর থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কমলনগর উপজেলার গ্রামীণ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিপর্যয় ঘটে। বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার পুরো দিন কাজ করার পরও শুক্রবার রাত ৯টা পর্যন্ত পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ঠিক করা যায়নি।
পল্লী বিদ্যুৎ কমলনগর অফিসের লাইনম্যান মোঃ মুমিনুল ইসলাম জানান,
বৃস্পতিবার রাতের সামান্য ঝড়ে তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট, কড়ইতোলা-ফাজিলমিয়ার হাট, লরেঞ্চ-ইসলামগঞ্জ বাজার দীর্ঘ লাইনে অসংখ্য গাছ ও ডালপালা ভেঙে বিদ্যুৎ লাইনের ওপর পড়ে। স্থানীয়রা জানায়, এ দিন ভেঙে পড়া প্রায় সবগুলো গাছই ছিল কড়ই গাছ। শুধু কমলনগরই না, রামগতি, লক্ষ্মীপুর, রায়পুর এবং রামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সমকারণে অবিরাম বিদ্যুৎ সরবরাহে বিপর্যয় ঘটে।
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, বিগত বছর ঘূর্নিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎতের অসংখ্য খুঁিট এবং বিভিন্ন সরঞ্চমাদির ক্ষতি হয়। এ সময় বহু স্থানে সড়ক বনায়নের গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে বৈদ্যুতিক লাইনে।
পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক ও কমলনগর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী,
সড়ক পাশে রেইনট্রি-কড়ই গাছের বনায়ন কে তিনি অপরিকল্পিত হিসেবে মনে করেন। তিনি বলেন, রেইনট্রি গাছ দ্রত বর্ধনশীল কিন্তু নরম। কয়েক বছর পরই ডালপালা ছড়িয়ে পড়ে। সামান্য ঝড়োবাতাসে রেইনট্রি গাছের ডালপালা ভেঙে যায়। তাতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তিনি দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি নেই বলে দাবি করেন।
লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসের মাইন উদ্দিন পাঠান জানান,
গাছ কাটার জন্য পল্লী বিদ্যুতের বার্ষিক যে বাজেট থাকে তারা তার কতটুকু ব্যবহার করে এবং কতবার গাছ কাটে সেটাও দেখতে হবে। তিনি ছাত্রছাত্রীদের চলমান এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে নিরবিচ্ছ বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানান।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার কে ফোন করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুতের একজন প্রকৌশলী বলেন,
প্রাকৃতিক দূর্যোগের কথা বলা যায় না। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য রেইনট্রি গাছের ক্ষতির কথা স্বীকার করেন তিনি। তিনিও বলেন, রেইনট্রি গাছ সামান্য বাতাসেই ভেঙে পড়ে। সেজন্য তিনি সরকারিভাবে রাস্তার পাশে বা বিদ্যুৎ লাইনের পাশে গাছ লাগানোর সময় ছোট ডালের গাছ লাগানো জরুরি বলে মনে করে।
0Share