পঞ্চান্ন বছর বয়সী আমির হোসেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। চোখ জুড়ে পানি টলমল করছে, তবুও এক টুকরো কাঁচ পেয়ে অতৃপ্ত হাসি তার মুখে। অভাবের তাড়নায় কাজের খোঁজে বছর বিশেক আগে আসেন লক্ষ্মীপুর। স্ত্রী, তিন মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে ভাড়ায় থাকেন লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের ডিবি রোড এলাকার হামিদ মাষ্টারের পুরান বাড়ীতে। প্রায় ২০ বছর ধরে ভাঙ্গা কাঁচ কুড়িয়ে সংসার চালাচ্ছেন আমির।
আমির হোসেনের বাড়ী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। বাবার বাড়ীতে এক টুকরো সম্পত্তি না থাকায় স্ত্রীকে সাথে নিয়ে চলে আসেন লক্ষ্মীপুর। স্ত্রী সন্তানদের মুখে আহার জোগাতে বিশ বছর ধরেই ভাঙ্গা কাঁচে স্বপ্ন দেখেন তিনি।
আটানা (পঞ্চাশ পয়সা) কেজিতে ভাঙ্গা কাঁচ বিক্রি শুরু করেন তিনি। এখন দেড় টাকা কেজিতে ভাঙ্গা কাঁচ বিক্রি করে প্রতিদিন তাঁর আয় হয় দেড়শত থেকে দুইশত টাকা। শহরের অলি-গলি ঘুরে ভাঙ্গা কাঁচ কুড়িয়ে ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করে কোনভাবে চালান পাঁচ সদস্যের সংসার। প্রতিনিয়ত অভাবের তাড়নায় চাপা পড়ে তাদের জীবনের কোলাহল। দূর থেকে শহরের মায়াময় আলো ছড়ানো বাতিগুলো তাদের জীবনকে রাঙ্গিয়ে তোলে না। অর্ধাহার-অনাহারে কাটে তাদের দিন। কেমন আছেন জানতে চাইলে হাসি মুখে আমির হোসেন তবুও বলেন বালা (ভালো) আছি।
আমির হোসেন বলেন, প্রতিদিন সকালে এক টুকরো ভাঙ্গা কাঁচের খোঁজে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়েন তিনি। কোনদিন ৪০ কেজি, কোনদিন তিন মণ আবার কোনদিন খালি হাতেও ফিরতে হয় তাকে। বাড়ীতে তীর্থের কাকের মতো খাবারের আশায় বসে থাকে তার পরিবারের সদস্যরা। কাঁচ কুড়িয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার স্বপ্নও দেখেন তিনি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিলেও অর্থাভাবে জামাতারা তাড়িয়ে দিলে তারাও থাকেন তার কাছেই। এক ছেলে ও এক মেয়ে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। জাতীয় পরিচয়পত্র নোয়াখালীর হওয়ায় ওএমএস বা সরকারি কোন সহায়তাও পাচ্ছেন না তিনি।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর রায়হান বলেন, জাতীয়পরিচয়পত্র লক্ষ্মীপুরের না হওয়ায় তাকে কোন সহযোগিতা করা যাচ্ছে না। তবে ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারলে তাকে ভাতার আওতাভুক্ত করা যাবে বলে জানালেন এই জনপ্রতিনিধি।
এদিকে লক্ষ্মীপুর জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক মোঃ নুরুল হুদা পাটোয়ারী জানালেন, আমির হোসেন যদি তার ব্যবসা প্রসারিত করতে চায় সেক্ষেত্রে সমাজ সেবা তাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।
0Share