লক্ষ্মীপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় লক্ষ্মীপুরের ১৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরের আন্দোলনে চারজন এবং বাকি ১২ জন রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন চলাকালীন সময় নিহত হন।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর পুলিশ অফিসার্স মেসের নতুন ভবনের অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা এ তথ্য জানিয়েছেন।
যদিও ঢাকায় নিহত ১২ জনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য তারা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেননি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লক্ষ্মীপুরে দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়ক মাফরাজ হোসেন, সারোয়ার হোসেন, এনামুল হক, মাহেদুর রহমান রাফি, আলমগীর হোসেন ও বায়েজিদ হোসেন প্রমুখ।
সমন্বয়ক মাফরাজ হোসেন বলেন, লক্ষ্মীপুরে ১৬ জন সন্তান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। এছাড়া গুলিবিদ্ধসহ বিভিন্নভাবে প্রায় ১৩০ জন আহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশের চিকিৎসা চলমান রয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত করে সঠিক তালিকা তৈরি করেছি। পরে তা লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আহতদের আরও উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
জানা গেছে, ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তারা হলেন- আল আসাদ আফনান পাটওয়ারী, সাব্বির হোসেন রাসেল, কাউসার হোসেন ও ওসমান গণি। এর মধ্যে আফনান শহরের মাদাম ব্রিজ ও অন্যরা তমিজ মার্কেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
এছাড়া ২১ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় স্যানিটারি মিস্ত্রি মো. ফয়েজ, ২০ জুলাই শনির আখড়ায় কসমেটিকস দোকানের কর্মচারী ইউনুস আলী শাওন, ১৮ জুলাই উত্তরা ডিএনসিসির সামনে ঢাকার মানারত ইউনিভার্সিটির ছাত্র শাকিল পারভেজ, ৫ আগস্ট ঢাকায় ইসলামী আন্দোলনের নেতা আলী আজগর মাসরুর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ৪ আগস্ট মিরপুর ১০ নাম্বারে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ সেপ্টেম্বর থাই গ্লাসের মিস্ত্রি পারভেজ হোসেন মারা যান। নিহতের স্বজনরা মৃত্যুর তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে তারা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে পানিবন্দিদের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এখনো মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এটি কৃত্রিম বা মানবসৃষ্ট বন্যা। খালবিল দখল ও অবৈধ বাঁধের কারণে এখনো পানিবন্দি হয়ে রয়েছে বিভিন্ন এলাকার মানুষ। আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করে ১৮ টি বাঁধ অপসারণ করেছি। এছাড়া ২৭৩টি বাঁধ চিহ্নিত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা রহমতখালী খাল, ওয়াপদা খাল ও ভুলুয়া নদীতে থাকা অবৈধ বাঁধ অপসারণে প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবো। পানিবন্দি সাড়ে ৪ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২৫ হাজার শিশুর জন্য শিশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
তারা আরও বলেন, সামনে দুর্গা পূজা। এসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার জন্য নির্মিত মূর্তিগুলো পাহারা দিতে আমরা কাজ করছি। পূজার সময়ও নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কাজ করবো। এছাড়া পুলিশ যেন সততার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন সময় আমরা তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
0Share