‘ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত সাড়ে ১২টা। কমলনগর উপজেলার চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের নবীগঞ্জ এবং তুলাতুলি এলাকার নদী ভাঙ্গা কৃষক আর দরিদ্র জেলা পরিবারের বাসিন্দারা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়লে আচমকা ভয়ে লাফিয়ে উঠলেন একনারী (৫৫)। তখনই বাইরে থেকে বলে উঠলেন, ভয় পাবেন না, আমি আপনাদের উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পী।
ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে সত্যিই অবাক ওই নারী। উপজেলা চেয়ারম্যান রাতে তাও আবার কাঁধে বস্তা নিয়ে ? বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি।
কিন্ত ঘটনা শতভাগ সত্য। সত্যিই তাই! স্বয়ং উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আর ভাইস চেয়ারম্যানরা প্যাকেট ভর্তি খাদ্যদ্রব্য গাড়িতে নিয়ে হাজির এ নিস্তব রজনীতে মানুষের ঘরে ঘরে । এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান নিজের কাধেঁর প্যাকেটটি তুলে দিলেন ওই নারীর হাতে।
আর জানিয়ে দিলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে আপনারা কর্মহীন হয়ে যেন না খেয়ে থাকেন তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা খাদ্যদ্রব্য নিয়ে চলে এসেছি আপনার বাড়িতে। আপনাদের কাজ এখন ঘরে থেকে শুধুমাত্র সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা।আগামীতেও প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সকল সাহায্য আপনারা পাবেন।
ওই নারী প্যাকেট খুলে তো আরো হতবাক ! চাল, ডাল, তেল, লবণ এমনকি হলুদ মরিচও আছে। এ সময় আবেগে অনেকটা কাদোঁ কাঁদো ভাব নিয়ে বললেন, আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন।
মঙ্গলবার ( ৩১ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে বারোটার এ সহায়তা পৌঁছানোর অভিযানে আরো উপস্থিত ছিলেন, কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন ও ভাইস চেয়ারম্যান ওমর ফারুক সাগর।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ওমর ফারুক সাগর বলেন,
খেটে খাওয়া মানুষদের পাশে থাকা অতি আনন্দের। এছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আমাদের এ কার্যক্রম চলতে থাকবে। আমার অনুরোধ এই পরিস্থিতে সবাই অসহায় লোকজনের পাশে দাঁড়াবে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন,
করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে দিনমজুর অসহায়দের নিজ নিজ বাড়িতে থাকা নিশ্চিত করতে ত্রাণ সামগ্রী দিচ্ছে সরকার। যথাযথভাবে ওইসব খাদ্যসামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে সচেতন করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
কমলনগর উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পি বলেন,
গত সোমবার উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে ত্রাণ বিতরণের খবর পেয়ে খেটে খাওয়া দরিদ্র শ্রেণির মানুষের ঢল নামে। যে কারণে সবাইকে করোনা মুক্ত রাখতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পি জানান, কমলনগর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার মানুষের কাছে ১০ কেজি চালসহ খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানো হয়েছে। পাশাপাশি নগদ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে জীবাণু নাশক ছিটানোর ১২টা স্প্রে পাম্প, ৫০ কেজি ব্লিচিং পাউডার, সাড়ে ৫ হাজার মাস্ক এবং ৬শ হ্যান্ড গ্লাভস । অন্যদিকে করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য ৪৫টা নিরাপত্তা মূলক বিশেষ পোশাক -পিপিই রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান রাতে খাদ্য দ্রব্য বিতরণসহ দিনের বেলায় সেনাবাহিনী, সিভিল প্রশাসনের সাথে গিয়েও নানা রকম সচেতনতামূলক কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন।
অন্যদিকে জানা যায়, কমলনগর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ গত সপ্তাহে ১৩ হাজার কার্ডধারী জেলের মাঝে ৪০ কেজি হারে চাল বিতরণ করেছে। তবুও কৃষক, জেলে ও দিনমজুর জনগোষ্ঠির এলাকা কমলনগরে আরও বেশি সরকারি বরাদ্দের দাবি করছেন জনপ্রতিনিধিরা।
এ সংক্রান্ত কিছু ছবি:
0Share