তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর: রায়পুরের সড়ক-মহাসড়কগুলো ভেঙেচুড়ে এখন বেহাল দশা। হাজার হাজার ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে এগুলোতে। শুধু প্রধান সড়কগুলো নয়, স্থানীয় সড়কগুলোর অবস্থাও একই। দীর্ঘদিন থেকে সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে এগুলো পথযাত্রীদের মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা।
গর্তের মাত্রা এতোটাই বেশি যে যানবাহন চলাচলে ৫-১০ হাত ভালো সড়ক খুঁজে পাওয়াও দুস্কর। গর্তের পর গর্তে এ রুটে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরাও ত্যক্ত-বিরক্ত। ব্রেক কষতে, কষতে তাদের ত্রাহী অবস্থা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রায়পুর পৌরসভা, এলজিইডি ও সড়ক বিভাগের রাস্তা মেরামত ও তৈরি কাজের শুরুতেই গলদ থাকায় তা সংস্কারের ২/৩ মাসের মধ্যেই ভেঙেচুড়ে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। মেরামত কাজের সময় সংশ্লিস্ট প্রকৌশল বিভাগের যথাযথ তদারকির অভাব ও বিশেষ কমিশন বাণিজ্যের কারণে সড়কগুলোতে অত্যন্ত নি¤œমানের কাজ করা হয় বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। টেন্ডার হলে একজন ঠিকাদার সে কাজ পেলেও তা ৫/৬ দফায় বিক্রি হতে হতে সর্বশেষ যিনি কিনে নেন তিনি কোনোমতে কাজ করেই নিজের ষোলআনা বুঝে নিতে যান। একারণে মোট বরাদ্ধের ৫০ ভাগ কাজও ঠিকমতো হয়না। নাম প্রকাশে এক ঠিকাদার জানান, ভাইরে ঘাটে ঘাটে টাকা দিলে রাস্তার কাজ কিভাবে ভালো হবে ?
সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত ৬ মাস আগে রায়পুর-লক্ষ্মীপুর ১৫ কিলোমিটার সড়ক ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ করা হয়। ওই কাজটি পান কুমিল্লার কান্দিরপাড় এলাকার ঠিকাদার ও আ.লীগ নেতা পাখি। ওই সড়কটির বহু স্থানে এখন গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। অসংখ্য স্থানে ওঠে গেছে পিচ ঢালাই ও পাথর। গত জুন মাসে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্যা সড়কের ২ কিলোমিটার সংস্কারের ১৮ লক্ষ টাকার কাজ পান ঠিকাদার ও বিএনপি নেতা ভূঁইয়া কামাল রায়হান। ওই সড়কটিরও বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। গত ২ মাস আগে ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে টিএন্ডটি সড়কটি সংস্কারের কাজ করার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দু’দফা হাত বদল হয়ে তৃতীয় ঠিকাদার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামীলীগ নেতা এখনো কাজটি শুরুই করেননি। এভাবে পৌরসভার ওয়ার্ডগুলোতে ও উপজেলার অন্যান্য স্থানে এলজিইডির সড়কগুলোরও বেহাল অবস্থা।
গত ৩/৪ বছরে অসংখ্য দূর্ঘটনায় আহত একাধিক নিহত হওয়াসহ আহত হয়েছে শতাধিক যাত্রী। অনেকটা মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে এই সড়ক, মহাসড়কগুলো। দেবে যাওয়ার অংশগুলো কয়েকটি স্থান দায়সাড়া ভাবে মেরমত করলেও তা কোন কাজে আসছে না। মেরামতের কয়েকদিন পরই তা আবার দেবে যাচ্ছে।
রায়পুর-হায়দরগঞ্জ সড়ক এখন সবচেয়ে বেশি মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। সড়কের ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রায় পুরো অংশ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদ থেকে হায়দরগঞ্জ বাজার পর্যন্ত অংশের শোচনীয় অবস্থা। রাস্তার অধিকাংশ স্থান খানাখন্দে ভরা। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েচে বড় বড় গর্ত। এসবের গর্তের কোথাও হাটু আর কোথায় উরু পর্যন্ত গভীর। দেখলে মনে হবে এটি রাস্তা নয় যেন ডোবা প্রায়ই এসব গর্তে পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী যানবাহন ও অটোরিক্স্রা দেবে যায়। এই কারণে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ ভোগান্তি। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই অঞ্চলের ফসল সয়াবিন, নারিকেল বিভিন্ন শস্য পরিবহন করছে।
কাপিলাতলি সড়কের কেএসপি উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনের রাস্তায় পুকুরের মত গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে প্রতিদিন দেবে যাচ্ছে যাত্রীবাহী যানবাহন ও আটোরিক্সা এবং পণ্যবাহী ট্রাক। এ সড়ক দিয়ে জন প্রতিনিধিরা যাতায়াতের সময় এলাকাবাসী রোষানলে পড়তে হয়। রায়পুর সড়ক থেকে গাজীনগর ও সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে বড় বড় গর্ত ও উঁচু নিচু থাকায় যানবহন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে সড়কগুলো সংস্কারের নামে দায়সারা ভাবে কাজ করা হয়।
রায়পুর-ফরিদগঞ্জ-পানপাড়া সড়কের গর্ত ও ফাটল দেখা দেওয়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় গত এক বছরে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৩০ জন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন বহু ব্যাক্তি, আহত হয়েছেন প্রায় এক হাজারেরও অধিক। সড়ক মহাসড়কের দুরবস্থা দেখা দিলেও কার্যত কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
রায়পুর -লক্ষ্মীপুর সড়কের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মৎস প্রজনণ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং জ্বীনের মসজিদ ও অপরূপ সৌন্দর্য মেঘনার তীরবর্তী হওয়ায় এই সড়ক দিয়ে দেশের নানা প্রান্তের মানুষ চলাচল করছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এই সড়কগুলোর মধ্যে সোনাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাটওয়ারীর রাস্তার মাথা, মাইলের মাথা, নতুন বাজার, হাজির তলা, পূবলাছ সরকারী প্রাথমিক সামনে, রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে, মৈশালবাড়ীর সামনে, মিতালী বাজার, হায়দরগঞ্জ বাজার, কাপিলাতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, গাজী নগর বাজার, রুস্তম আলী ডিগ্রি কলেজের সামনে ও খাসের হাট বাজার নামক স্থানে রাস্তাজুরে ব্যাপক গর্ত ও ফাটল দেখা দিয়েছে। কয়েকটি স্থানে ইট ও বালু দিয়ে কিছু কিছু গর্ত ভরাট করা হলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না।
দেবীপুর গ্রামের বিশিষ্ট সমাজ সেবক মাহবুব আলম চৌধুরী ও প্রধান শিক্ষক হাবিব আহমে¥দ পাটওযারী বলেন, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে। সড়কটি মেরামতের জন্য এমপি ও চেয়ারম্যানকে বললেও তারা কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। অটোরিক্সা চালক ইব্রাহীম বলেন, প্রতিদিন মানুষ এই সড়ক দিয়ে পারা পার হতে ঠিকাদার ও চেয়ারম্যানদেরকে ভোড় চৈতাল বলে। আর দু’দিন পর পর গাড়ীর একটা একটা পার্টস ভেঙ্গে যায়। পরিবহন চালকরা যে কোন সময় রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রায়পুর পৌরসভার মেয়র এবিএম জিলানী ও নির্বাহী প্রকৌশলী এটিএম সাদেক বলেন, পৌরসভার সড়কগুলো সংস্কারের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। সংস্কার কাজে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে সে কাজগুলো স্থগিত রাখা হয়েছে। অন্য সড়কগুলো দ্রুত করার জন্য চেষ্টা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, কোন বরাদ্ধ না পাওয়ায় সড়কগুলো মেরামত বা সংস্কার কাজ করা যাচ্ছে না। এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানরা সড়কের বিষয়ে জানালেও কিছুই করা যাচ্ছে না। তারপরও হায়দরগঞ্জ সড়কটি ইট-বালু দিয়ে সাময়িক মেরামত করে দেয়া হয়েছে।
0Share