মো: আশরাফ আলী | রাক্ষসী মেঘনার থাবায় জর্জরিত রামগতি। লক্ষ্মীপুরের দু-তৃতীয়াংশ ভূমি হারানো ৩৪৭ বর্গ কিলোমিটারের উপজেলা এটি।উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় তুফান, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা এখানকার নিত্য সঙ্গী।এর উপরে ঝেঁকে বসেছে ৪৩টি অবৈধ ইটভাটা। এ যেন দুনিয়াই চলছে জাহান্নাম তৈরির ঘৃন্য প্রতিযোগিতা। উপকার-অপকার নিয়েই আমাদের পথ চলা। আজ আলোচনা দু’ দিক নিয়ে।
১.ইটভাটা তৈরিতে ফসলি জমি ধ্বংস হচ্ছে। ইটকাটা শেষ হওয়ার পর প্রায় ৫/৭ বছর একই স্থানে কোনো ফসল উৎপন্ন হয় না।
২.ভাটায় ইট তৈরির মাটি সংগ্রহে গত এক দশকে গড়ে ৬-৮ ইঞ্চি ভূমিক্ষয় হয়েছে।
ক. নিচু এই ভূমিতে রবিশস্য উৎপাদন ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। যেমন- বাদাম, মরিচ, মিস্টি-আলু, খেসারি ও হেলন ডাল ইত্যাদি চাষাবাদ শুন্যের কোটায় চলে এসেছে।অথচ এসব শস্যের আবাসভূমি রামগতি।
খ.বিভিন্ন স্থান থেকে গর্ত খুড়ে মটি নেয়ায় চাষ উপযোগী উর্ভর মাটিগুলো ধুয়ে সে-সব গর্তে জমাটবদ্ধ হচ্ছে।ফলে ফসল উৎপাদনে অতিরিক্ত সার-ঔষধ প্রয়োগের দরকার হয়। এতে একদিকে যেমন চাষাবাদ খরচ বেড়ে যায় তেমনি কাঙ্খিত মানের পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ ফসল পাওয়া যাচ্ছে না।
৩.ভাটায় জালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় লাকড়ি।প্রতি বছর লাখ লাখ গাছ জ্বালায় এক-একটি ইটভাটা। ফলে নিরবে ধ্বংস হচ্ছে বনায়ন।দিন-দিন আবহাওয়া উষ্ণ হওয়ার পাশাপাশি ঋতুবৈচিত্রেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।খরা মৌসুমে অনাবৃষ্টির প্রভাবে ফল-ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে জ্যমিতিক হারে। নারকেল গাছ, সুপারি বাগান ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কোনো ফসল নেই।
৪. ইটভাটার ধোঁয়ায় মলিন হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস। বিশুদ্ধ বায়ুর অভাবে মানুষ যেমন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হারাচ্ছে তেমনি জাতীয় গড় আয়ুতে তারতম্য দেখা দিয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের মৃত্যু হারে। সর্দিকাশি সহ হার্টএট্যাকের মত দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
৫.যোগাযোগ ব্যবস্থার দারুণ ক্ষতি করছে সর্বগ্রাসী ইটভাটা। অবৈধ পাওয়ার ট্রলির দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ এই অঞ্চলের মানুষ।প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণঘাতী দূর্ঘটনা।
ট্রলির চাকায় পৃষ্ঠ হওয়া থেকে রেহাই পাচ্ছে না আবালবৃদ্ধবনিতা কেউ। এমনকি “রাস্তা ছেড়ে বসতঘরে ডুকে পড়েছে ইটভাটার ট্রলি” এ জাতীয় সংবাদ অহরহ।
ক্ষতবিক্ষত যোগাযোগ ব্যবস্থা।রাস্ট্রীয় অর্থে নির্মিত এসব রাস্তাঘাট যেন ইটভাটার পৈত্রিক সম্পত্তি। দশ বছর মেয়াদে নির্মিত রাস্তা বছর ফেরুতেই বেহাল দশা। কাচা এবং আধাপাকা রাস্তার অবস্থা বেশি খারাপ। শুকনো মৌসুমে ধুলাবালিতে ঢেকে যায় প্রতি ইঞ্চি মাটি।আর বর্ষাকালে কাদামাটিতে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। পরিবেশ দূষণের এমন ঘৃন্য লীলার নিরব স্বাক্ষী এ অঞ্চলের মানুষ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনবসতির ১ কিলোমিটার দূরে ইটভাটা তৈরির আইন(ইট পোড়ানো আইন-২০১৯) আছে।অথচ এখন প্রাইমারি স্কুলের নাকের ঢগায় বসতি ভেঙ্গে যবর দখল করে ভাটা তৈরির অভিযোগও রয়েছে।
সূত্র মতে, ৪০ টি ইটভাটার তথ্য আছে উপজেলা প্রশাসনের কাছে।এতে ২ টির অনুমোদন রয়েছে। বাকীগুলো অবৈধ। গেল বছর ১১ টি ভাটায় অভিযানে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবুও কি থেমেছে – শিশু শ্রমের এসব ইটভাটা??
0Share