সানা উল্লাহ সানু | লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার সবচেয়ে অবহেলিত ইউনিয়ন চর কাদিরা। এই ইউনিয়নের মানুষগুলো যুগ যুগ ধরে ভুলুয়া নদীলর জলাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন। এই ইউনিয়নের এমন অনেক গ্রাম আছে যেখানে জলাবদ্ধতার কারণে মানুষ জমিতে ফসল ফলাতে পারে না, ঘরবাড়ি করে বসবাস করতে পারেনা। জলাবদ্ধতােই ইউনিয়নের মানুষগুলোর উন্নয়নের পথে প্রধান বাঁধা। স্থানীয় এলাকাবাসী এসব তথ্য জানিয়েছে।
গত কয়েক দিন যাবত সেই চিরদুঃখী চর কাদিরা ইউনিয়নের একটি সেতু ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে নানান হইহুল্লোড়। চর কাদিরা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড ফজুমিয়ারহাট ও রব বাজার সড়কের ভুলুয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির সরকারি কোন নাম নেই। তবে ইতোমধ্যে সেতুটি শহীদ মাযহারুল ভুলুয়া সেতু নামে পরিচিতি পেয়েছে।
কিন্ত এ সেতুটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে এত উম্মাদনা কেন ?
স্থানীয় যুবক মোঃ রাসেল খাঁ জানান, চর কাদিরা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড ফজুমিয়ারহাট ও রব বাজারের মধ্যে বাইপাস সড়কটি ভুলুয়া নদীর কারণে বহু বছর বিভক্ত ছিল। সেতুর অভাবে এ অঞ্চলের মানুষ অনেক দূর ঘুরে ফজুমিয়ারহাট কিংবা আশপাশের বাজারে আসা যাওয়া করতো।
২০২৩ সালে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভুুলুয়া নদীর ওপর ৬০ মিটার বা ১৯৬ ফুট লম্বা সেতুটির নিমার্ণ শুরু হয়। ২০২৪ সালের মে মাসে সেতুটি হাটা চলা করার জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
তবে সেতুটি এ অঞ্চলের পরিবেশ ও ভুলুয়া নদীর জন্য ভবিষ্যতে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ সেতুর ত্রুটিপূর্ণ নিমার্ণ নিয়ে ২০২৫ সালের ১১ জানুয়ারি তারিখে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এ সেতুটি খুবই নিচু। মাটি থেকে মাত্র ৪-৫ ফুট ওপরে পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে নদীতে খুব বেশি পানি হলে বা বন্যা হলে এ সেতুর স্প্যান পানি আটকে রাখবে এবং সেতুর নিচ দিয়ে কোন জলযান যাতায়াত করতে পারবে না। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সেতু ও রাস্তার সৌন্দর্য প্রদর্শিত হচ্ছে কিন্তু এ সেতু এ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির নতুন কারণ হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
হঠাৎ কেন আলোচিত ভুলুয়ার এ সেতু ?
শহীদ মাযহারুল ভুলুয়া সেতু যে গ্রামীণ সড়কের মধ্যে অবস্থিত সে সড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার জুড়ে সড়কের দুপাশে কোন বাড়িঘর নেই, নেই কোন জনবসতি। ভুলুয়া নদীর জলাবদ্ধতার কারণে এখানে কেউ বাড়ি করে থাকতে পারছে না। তাই প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুধু ফসলি মাঠ ছাড়া অন্য কিছু দেখা যায় না। যা দেখতে বিলের মতো সুন্দর লাগে।
গত সয়াবিন মৌসুমে সড়কের দুপাশের সয়াবিন ক্ষেতগুলো দেখতে খুবই চমৎকার লাগছিল। সেসময় সয়াবিন ক্ষেতের মাঝে সড়ক এবং সেতুর একটি ভিডিও পোস্ট করা হয় লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোরে। এরপর বিভিন্ন যুবক ও তরুণদের নজরে আসে এ সেতুটি। অন্যদিকে বর্তমানে এ সেতুটি ঘিরে সেখানকার কয়েকজন যুবক ফেসবুকে কয়েকটি ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউবে চ্যানেল খুলে প্রতিদিনই এ সেতু নিয়ে নানা কন্টেন্ট পোস্ট করছে। যা অন্য এলাকার তরুণদের মধ্যে আকর্ষণ ও উম্মাদনা তৈরি করছে। দলে দলে তরুণ ও যুবকরা ছুটে আসছে।
এ সেতুর আশপাশে যে পানি দেখা যাচ্ছে তা মূলত ভুলুয়া নদীর জলাবদ্ধতা। কারণ এ নদীতে অসংখ্য বাঁধা থাকার কারণে ভুলুয়া নদীর এ অংশের পানি মেঘনা নদীতে যেতে পারে না। বর্তমানে তরুণরা সেতু থেকে হাওরের মতো যে পানিগুলো দেখছে এ পানির কারণে আশপাশের বিপুল পরিমাণ এলাকায় কৃষকরা ক্ষেতে আমন ধান করতে পারে না। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে এ সেতুর আশপাশ এত সুন্দর থাকে না, কারণ এলাকাটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি ইটের ভাটা।
চরকাদিয়া ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা ইউনিয়নবাসীর জন্য বহু দিরের দুঃখ দুর্দশার বড় কারণ হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ অঞ্চল হয়ে উঠেছে এখন বিনোদনের জায়গা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে চর কাদিয়ার এই সেতু, এলাকার জলাবদ্ধতা ও দৃষ্টিনন্দন রাস্তা।
তবে আলোচনার বাইরে আড়াল হয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের জলাবদ্ধ জীবনের দুঃখ দুর্দশার কথা । সবে মিলে এখানকার সচেতন মানুষ মনে করছে চর কাদিরার ভুলুয়া নদীর জলাবদ্ধতা দূর হলে এ অঞ্চলের সত্যিকার সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। নতুবা এ ক্ষনস্থায়ী হৈহৈল্লোড় এলাকাবাসীর নতুন ভোগান্তির কারণ হবে।
0Share