সানা উল্লাহ সানু | লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর
লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় উপজেলা রামগতি এবং কমলনগরের সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধের বিষয়ে আইনী লড়াইয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছে ঢাকাস্থ রামগতি ও কমলনগরের সকল আইনজীবিরা।
মঙ্গলবার ( ১১ মার্চ) ঢাকার সেগুনবাগিচায় অনুষ্ঠিত একটি সভায় এ ঐক্যমত পোষণ করেন তারা। ঢাকাস্থ রামগতি কমলনগর ল’ইয়ারস এ্যাসোয়িশেন এ সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা ও আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন দোলন। এসময় সুপ্রীম কোর্ট ও ঢাকার জজ কোর্টের রামগতি কমলনগরের ৩৫ জন আইনজীবি উপস্থিত ছিলেন।
বিস্তারিত তুলে ধরে ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন দোলন বলেন,
‘’ আমি নিজে কখনো কোন জায়গায় নিজের পরিচয় দিই না। কিন্ত আমি কেন আপনাদেরকে এখানে ডেকে নিয়ে আসলাম ? ডেকে নিয়ে আসলাম এ কারণে যে আমি সিরিয়াস কিছু সমস্যায় পড়েছি। আমরা সবাই ঢাকা শহরে কষ্টের মধ্যে থেকে যখন শান্তির জন্য গ্রামে যাই তখন সেখানে গিয়ে এখন নিঃস্বাসটাও নেয়া যাচ্ছে না। গ্রামের সুন্দর সুন্দর সব রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। আমার গ্রামের বাড়ির পাশের তিনজন লোকের ২জনের বাচ্চায় গর্ভে মারা গেছে একজনের জন্মের পরপরই মারা গেছে। ২৫-৩০ বছর বয়সি ছেলেরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। আর এগুলো ঘটছে ৪ রেডিয়াস কিলোমিটারের মধ্যে যেখানে ইটভাটা আছে সেখানে।
মিস্টার দোলন বলেন,
“ আমি তখন একটা ইনেশিয়েটিভ নিলাম। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে কথা বললাম। তারা সবাই একমত হলো এটা বন্ধ হওয়া দরকার। কিন্ত কেউ সামনে আসবেন না। কিন্ত কেন সামনে আসবেন না ? কারণ ইটভাটা রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য আয়ের একটা বড় উৎস। যখন দেখলাম রাজনীতিবিদরা এগিয়ে আসছেনা কিন্ত সাপোর্ট করছে, যখন দেখলাম প্রশাসন সহযোগিতা করছে না। তখন আমি কোর্টে গেলাম। কোর্টে গিয়ে প্রথমে ২টি ইটভাটা বন্ধের পারমিশান নিলাম। ২টি ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেল। আমি ধরে নিলাম এ একটি অর্ডার সকলকে একটা মেসেঞ্জ দিবে।
২ কিলোমিটারের মধ্যে কোন পুকুরে মাছ হয়, কোন নারিকেল গাছে নারিকেল হয় না, কোন জমিতে ফসল হয় না। আমার একটা সুন্দর জীবন আছে আমি এগুলো নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। কিন্ত যখন দেখলাম একটা জনপদ একদিকে নদী ভাঙ্গনের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে আরেক দিকে মানুষের বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। তখন আমি দায়িত্বটা নিলাম।
ব্যারিস্টার দোলন আরো বলেন,
২টা ইটভাটা বন্ধ হওয়ার পরপরই অনেক রাজনীতিবিদরা আমার নিকট আসলো। তারা আমাকে অনুরোধ করলো বাকি ইটভাটা গুলো বন্ধের বিষয়ে তাদেরকে যেন জুন পর্যন্ত সময় দিন। একজন রাজনীতিবিদ দায়িত্বও নিলেন। তিনি বললেন পুরাতন গুলো বন্ধ হয়ে যাবে। নতুন আর কোন ইটভাটা হবে না। কিন্ত এ প্রতিশ্রুতি দেয়ার মাত্র ২ মাসের মধ্যে নতুন ১০টি ইটভাটা তৈরি হলো।
রামগতি ও কমলনগেরে একশটা ইটভাটা হোক তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্ত সেগুলো হতে হবে পরিবেশ বান্ধব। আমি বললাম আপনারা ব্যবসা করতে চাইলে ব্যবসা সেভাবে করেন। কিন্ত তারা সেভাব করবে না। বাংলাদেশের কোন জেলায় এরকম ইটভাটার অনুমোদন দেয় না। রামগতি ও কমলনগর থেকে প্রতিদিন রাতে অন্তত ১০শ ট্রাক ইট দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। রাস্তাগুলো সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এজন্য আমি দেখলাম তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, আমি যখন দেখলাম স্থানীয় প্রশাসন সাহায্য করছে না, রাজনীতিবিদরা এগিয়ে আসতেছেনা, সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই। মানুষের হাজারো সমস্যা তৈরি করা ইটভাটা অপ্রতিরোধ্য ভাবে চলছে কোন এক অজানা কারণে । তখন আমি দেখলাম আদালত ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এরপর আমি ওই কেসটা আবার মোভ করালাম।
মিস্টার সালাহ উদ্দিন দোলন বলেন,
এখন আপনাদেরকে কেন ডাকলাম ? কারণ ইতোমধ্যে আমি কাজটা করে ফেলেছি। আদালত অর্ডার করেছে রামগতি কমলনগরের সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাবে। কোর্টের ম্যাসেঞ্জগুলো শীঘ্রই পৌঁছে যাবে। কাজটা শেষ হয়েছে। এখন আমরা সবাই একসাথে ঐক্যমত হয়েছি যে রামগতি কমলনগরের সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জন্য আমরা আইনজীবিরা এক। এ ম্যাসেঞ্জটা আমরা সবাইকে দিতে চাই।
প্রসঙ্গত: এর আগে গত ৪ মার্চ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আদেশে রামগতি ও কমলনগরের সকল (৫৮টি) অবৈধ ইটভাটা বন্ধের আদেশ দিয়েছেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন দোলন। স্থানীয়রা আশা করছে আদালতের এ রায়ের ফলে চলতি মৌসুম শেষে রামগতি ও কমলনগরের সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধের কার্যক্রম শুরু হবে।
380Share