সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শুক্রবার , ৩রা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৮ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

হুসাইন মুহাম্মাদ রাসেল  |  জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়েছে। গত বছর এমন দিনে বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের সাক্ষী হয়েছিল। একটি তরুণ জাতি তার অধিকার ও ন্যায়ের স্বপ্ন বুনে রাজপথে নামে। কোটা সংস্কার থেকে শুরু করে সর্বস্তরের অসাম্য, অবিচার ও অবহেলার বিরুদ্ধে দেশের লাখো মানুষের চিৎকার ছিল এক নতুন বাংলাদেশের ডাক। প্রত্যাশা ছিল নতুন এক সময়, নতুন এক সিস্টেম, যেখানে প্রতিষ্ঠা হবে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার, স্বচ্ছতা থাকবে প্রতিটি দপ্তরে।
কিন্তু এক বছর পেরিয়ে আজ সেই প্রত্যাশার সঙ্গে আমাদের প্রাপ্তির মাঝে বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করা যায়। রাষ্ট্রের মূল কাঠামো আজও অটল। সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। সংস্কারের মুখরোচক গল্প শুনালেও বাস্তবতা শুধুই ধোঁয়াশা। ফ্যাসিস্ট কে সরিয়ে সেই ফ্যাসিস্টের সিস্টেমেই চলছে দেশ। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিলো এক নতুন দিনের উদিত সূর্য। যেখানে প্রত্যেকের স্বপ্ন ছিলো সর্বস্তরে বৈষম্যের অবসান, সংস্কার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং পরিবর্তনের এক সোনালী সকাল। কিন্তু আজ এক বছর পেরিয়ে দেখা যায় জুলাইয়ের উদিত সূর্য পুরোপুরি আলো দিতে পারেনি। সিস্টেমের মেঘে ডাকা পড়েছে এক নির্যাতিত, অবহেলিত জাতির স্বপ্ন।’
 
এখন সময় এসেছে আমাদের প্রত্যাশার আর প্রাপ্তির সেই সমীকরণটি বিশ্লেষণ করার। আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? কী ভুল হয়েছে? এবং কীভাবে সেই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এক নতুন গতিতে দেশকে এগিয়ে নিতে পারি! জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল মূলত তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ এই আন্দোলনকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছিল। প্রত্যাশা ছিল সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায়বিচার ও সমান সুযোগের নিশ্চয়তা। চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাসহ সর্বক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করা।
 
এই প্রত্যাশার পেছনে ছিল এক জোরালো বিশ্বাস, যেখানে অবিচার ও দুঃশাসনকে চিরতরে দূরে ঠেলে দিয়ে নতুন এক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা। সেই বিশ্বাসেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এদেশের আপামর জনসাধারণ। কিন্তু বছর পেরিয়ে আমরা দেখতে পাই, সেই বিশ্বাসের জায়গায় এসেছে বড় ধরনের হতাশা।
 
যে বৈষম্য নিরসনে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমেছিলো, সে বৈষম্য নিরসন হয়নি। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়ে গেছে। রাজনৈতিক দল ও তাদের শাখা সংগঠনগুলোর প্রভাব নিন্দনীয়। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ফ্যাসিস্টের দোসর কিংবা নব্য ক্ষমতার স্বাদের অপেক্ষমান শক্তির প্রভাব বিরাজমান। দেশের ল’ এন্ড অর্ডারের অবস্থা ভঙ্গুর। গুম, খুন অপরাজনীতির বিচার হয়নি।অন্যায়-অত্যাচার-অবিচারের মাত্রা আগের মতোই রয়ে গেছে।
 
এখানে এক গভীর সমস্যার পরিচয় পাওয়া যায় আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং শাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তিগুলো এখনও অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। পরিবর্তন চেয়েছিলাম সিস্টেমেটিক, কিন্তু পেয়েছি সাময়িক, অংশত। দৃশ্যমান সংস্কার পাওয়ারফুল চশমা দিয়েও দেখা যায় না। দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খার ছিঁটেফোঁটাও পূরণ হয়নি।
 
রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দেশে এক দলীয় শাসনের রং এখনও চর্চায় প্রবল। স্বৈরাচারী মনোভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার নতুন নয়, বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির প্রভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা অনেকেই নিজেদের স্বার্থে কাজ করে চলেছে, যা সাধারণ মানুষের অধিকার ও সুযোগের প্রতিবন্ধক। গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক সংগঠন ও সমাজের অংশগ্রহণ ভালো হলেও, দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা ও উদ্যোগের অভাব রয়েছে। বিচার বিভাগ স্বচ্ছ ও স্বাধীন করার পরিবর্তে রাজনৈতিক চাপ ও প্রভাবের কবলেই বেশি পড়ছে।
 
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহনশীলতা ও গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে। শীঘ্রই গুম-খুন-হত্যার বিচার করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর করতে হবে। নাগরিক সমাজকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তথ্যপ্রাপ্তি ও প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। স্বচ্ছতা বাড়ানো, দুর্নীতিবিরোধী আইন কঠোর করা এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধু সরকার বা আন্দোলনের ওপর নির্ভর না থেকে, নিজেদেরও সচেতন ও সক্রিয় থাকতে হবে। দল-মত পেরিয়ে দেশের কল্যাণ ভাবতে হবে।
এক বছরের মাথায় আজ আমরা বলতে পারি, জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসের একটি অমলিন অধ্যায়। কিন্তু সেই অধ্যায়ের সফলতা নির্ভর করে এখনকার আমাদের কর্মকাণ্ডের ওপর। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যকার দূরত্ব কমাতে আমাদের সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমরা যেভাবে প্রথমবারের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেই ঐক্যবদ্ধ মনোবৃত্তি ধরে রাখতে পারলে, নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু এই লক্ষ্য অর্জনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং তা বাস্তবায়ন করা জরুরি।
 
এই এক বছরে আমরা শিখেছি, সিস্টেমের পরিবর্তনের জন্য গণঅভ্যুত্থান কিংবা আন্দোলনই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন ধারাবাহিকতা, কৌশল, এবং পদক্ষেপ বাস্তবায়নে শক্ত মনোভাব। যেখানে শুধু ক্ষমতা পাল্টাবে না, বরং শাসনব্যবস্থা, নীতি ও প্রশাসনিক সংস্কৃতিও বদলে যাবে। আর সাধারণ মানুষের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
 
লেখক: শিক্ষার্থী ও নবীন সংবাদকর্মী, লক্ষ্মীপুর । 

মতামত | সাক্ষাৎকার আরও সংবাদ

লক্ষ্মীপুরে নজরুল ও কবি নজরুল এভিনিউ

ভুলুয়া নদীর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা আর ত্রুটিপূর্ণ সেতু ঘিরে মানুষের এত উম্মাদনা কেন ?

লক্ষ্মীপুর | রাজনীতির উর্বরভূমিতে উন্নয়ন স্বল্পতা

রামগতি কমলনগরের সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ঢাকাস্থ আইনজীবিদের ঐক্যমত

জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি পাঠ্যপুস্তকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে : এ্যানি

শিক্ষকের সম্মান ও সমাজের দায়িত্ব

Lakshmipur24 | লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়ে নিবন্ধিত নিউজপোর্টাল  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2025
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Muktizudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com