আবুল কালাম আজাদ, লক্ষ্মীপুর: ‘বিআরটিএ অফিসে দালালের মাইধ্যমে (মাধ্যমে) না গেলে হেতারা কতাও (কথা) কয় না। বছরের হর (পর) বছর ঘুরিও লাইসেন্স হান (পাওয়া) যায় না। লাইসেন্স করিও লাভ নাই, হেইটা থাকলেও হঁতে হঁতে (পথে) টেঁয়া (টাকা) দেন লাগে। অন (এখন) মান্থলী (মাসিক চাঁদা) দেই, আবার লাইসেন্স করিউম (করব) কিয়ের লাই।’কথা গুলো লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ এলাকার সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক আমীর হোসেনের। তিনি চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার মতো একই কথা বলছেন জেলার বেশ কয়েকজন অটোরিকশা চালক।
লক্ষ্মীপুরে দশ হাজারের বেশি সিএনজি অটোরিকশা রাস্তায় চললেও চালকের লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৪টি। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান না থাকা শিশু কিশোর ও অনভিজ্ঞরা চালক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। অন্যদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিআরটিএ লক্ষ্মীপুর কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশার মধ্যে লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে ৬ হাজার ২শ’ টির নিবন্ধন রয়েছে। এছাড়াও নোয়াখালী, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায় নিবন্ধন নেয়া আরো ৪ হাজারের বেশি সিএনজি অটোরিকশা লক্ষ্মীপুরে চলাচল করছে। এসব অটোরিকশার বিপরীতে লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে মাত্র ৪ জন চালক লাইসেন্স নিয়েছেন। তবে ৪ জনের ত্রি হুইলার ছাড়াও আরো কয়েকজনের হালকা ক্যাটাগরির লাইসেন্স রয়েছে বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক (অতিরিক্ত) জিয়া উদ্দিন।
সরেজমিন জানা গেছে, জেলায় সিএনজি অটোরিকশা চালকদের মধ্যে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী অসংখ্য শিশু কিশোর রয়েছে। এদের অধিকাংশের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা নেই। একই অবস্থা প্রায় ৫ শতাধিক লেগুনা (যাত্রীবাহী পিকআপ) চালকের। এদের অধিকাংশ আগে রিকশাসহ অন্য পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সে কারণে দিন দিন বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। জেলায় গত ২ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। এর মধ্যে অটোরিকশা ও লেগুনা চাপায় ৯ জন নিহত হয়।
চন্দ্রগঞ্জ এলাকার সোহাগসহ একাধিক সিএনজি অটোরিকশা চালক জানান, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাম করে প্রতি মাসে প্রতি চালক থেকে লক্ষ্মীপুর শহরের সিএনজি অটোরিকশা স্টেশনে ২০০ টাকা, চন্দ্রগঞ্জে ৩০০ টাকা, দাসেরহাট বাজারে ১০০ টাকা ও মান্দারী বাজারে ২০০ টাকা করে ‘মান্থলি’ (মাসিক চাঁদা) আদায় করা হচ্ছে। লাইসেন্স না থাকায় হয়রানি এড়াতে চালকরা এ চাঁদা দিচ্ছেন বলে জানান। এছাড়াও সবগুলো স্টেশনে শ্রমিকদের কল্যাণের কথা বলে প্রতিদিন প্রতি চালক থেকে ৮০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা নেয়া হয়। কিন্তু এ টাকা শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কয়েকজন এ টাকা তুলে নিচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সিএনজি অটোরিকশা ও টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবু চৌধুরী জানান, চন্দ্রগঞ্জ ও বটতলী স্টেশনে হাইওয়ে পুলিশের নাম করে টাকা আদায়ের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে রাস্তায় হয়রানি এড়াতে বিভিন্ন খাতে কিছু টাকা দিতে হয়, সেজন্য তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন প্রতি চালক থেকে ২০০ টাকা নয়, ২৫ টাকা চাঁদা নিচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের জানান, তাদের নামে মাসিক টাকা আদায়ের বিষয়টি তার জানা নেই। বিআরটিএ লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুর রশিদ জানান, গ্রাহক হয়রানি রোধ ও দালালমুক্ত করার চেষ্টা করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা পেলে জেলার সব অটোরিকশা চালককে এক সপ্তাহের মধ্যে লাইসেন্সের আওতায় আনা সম্ভব। লাইসেন্স না থাকায় গত দুই মাসে সাত অটোরিকশা চালকের ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আবেদনের পর পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হলে দ্রুত লাইসেন্স দেয়া হবে। লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, থানা পুলিশের নাম করে কেউ সিএনজি অটোরিকশা স্টেশন থেকে টাকা আদায় করলে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
0Share