• উপজেলায় ৫১টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ মাত্র দুইটি !
• এক গ্রামে ২৭টি ইটভাটা !
• কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের মাটি ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে ইট।
• ভ্রুক্ষেপ নেই পরিবেশ অধিদপ্তর, কৃষি, বন ও বিদ্যুৎ বিভাগের।
• চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে উপকূলের অবহেলিত মানুষগুলো।
• সরকারি আইনে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, মানছেন না ইটভাটার মালিকেরা।

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ইটভাটা রয়েছে ৫১টি এরমধ্যে ৭টি ভাটায় সংযোগ দিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগ, বাকিরা চালাচ্ছেন অবৈধভাবে। মূলত কোন অবৈধ ভাটায় বিদ্যুৎ বিভাগ বৈধ সংযোগ দিতে পারেন না। এসব ভাটার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছেন না বিদ্যুৎ বিভাগ। 

লক্ষ্মীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৫১টি ইটভাটার মধ্যে বনলতা ও সরকার ব্রিকস নামে দুটি ইটভাটা পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়েছে। শুধুমাত্র তারাই বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে। বাকি ৪৯টির জন্য কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি, তাই বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে না। বিদ্যুৎ বিভাগকে বিষয়টি জানানো হবে। অবৈধ ভাটাগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, দ্রুত হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ রাখার আদেশ অনতিবিলম্বে কার্যকর করা হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার অবৈধ ইটভাটাগুলো ইট উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, কোনো কোনো ভাটায় কাঁচা ইট প্রস্তুত শেষ পর্যায়ে, এখন শুধু আগুন জ্বালানোর বাকি, আবার কোনো কোনো ভাটা শুধু তৈরি করছে কাঁচা ইট। কেউ কেউ ইট পোড়ানোর জন্য প্রস্তুত করে রেখেছে, কেউ ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে। সব ভাটায় কাজ করছেন শত শত শ্রমিক। ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। ভাটাগুলোতে অনেক শিশুকেও কাজ করতে দেখা গেছে।

ভাটাগুলো আশপাশের ফসলি জমির ফসল ও বিভিন্ন রবিশস্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইট তৈরিতে ব্যবহার মাটির পুরোটাই আসছে ফসলি মাঠ থেকে। কৃষিজমি রক্ষায় কৃষি বিভাগের নেই কোনো পদক্ষেপ। প্রতিটি ভাটায় ব্যবহার হচ্ছে কাঠ, এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই বন বিভাগের। নজরদারি নেই পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিদ্যুৎ বিভাগেরও।

উপজেলার চর রমিজ ইউনিয়নের চর আফজল গ্রামের বাসিন্দা মিলন মিয়া জানান, এক গ্রামে এতগুলো ইটভাটা ভাবতেই অবাক লাগে। ভাটার পাশেই স্কুল, সড়ক, বসতবাড়ি, কৃষিজমি, হাটবাজার ও গাছপালার বাগান। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে ইট উৎপাদন। প্রতি বছর নতুন নতুন ইটভাটা গড়ে উঠলে এ গ্রামে আর বসবাস করার পরিবেশই থাকবে না। ইট উৎপাদন মৌসুম চলাকালে নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। তিনি আরও জানান, মৌসুম চলাকালে বছরে একদিন হয়তো হঠাৎ অভিযানে আসে প্রশাসন। ভাটার চিমনি ফেলে দেয়। হয়তো কিছু টাকাও জরিমানা করে। কিন্তু সকালে ভাটার চিমনি ফেলে দিলে আবার বিকেলে তা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। ফের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায় ভাটার।

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রামগতি জোনাল অফিসের জেনারেল ম্যানেজার (ডি,জি,এম) খায়রুল ইসলাম বলেন, রামগতির ৫১টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ সংযোগ রয়েছে ৭টি ভাটার। ভাটাগুলো হলো মেসার্স তিশা ব্রিকস, মেসার্স ওহাব ব্রিকস, মেসার্স বাঘা ব্রিকস, মেসার্স ছালেক মিয়া ব্রিকস, মেসার্স বনলতা ব্রিকস, মেসার্স জননী ব্রিকস ও মেসার্স সততা ব্রিকস। বাকিগুলো অবৈধ সংযোগ দিয়ে চলছে। কেন বন্ধ করছেন না এ প্রশ্নে তিনি জানান, এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অবৈধ সংযোগ কেন বন্ধ করছেন না এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অবৈধ ইটভাটায় কিভাবে সংযোগ দিলেন এমন প্রশ্নে সঠিক জবাব দিতে পারেননি তিনি।

রামগতির ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, হাইকোর্টের আদেশ কার্যকর করতে ও অবৈধ ইটভাটা বন্ধ রাখতে গত আগস্ট মাসে যেসব এলাকায় ইটভাটা রয়েছে ওইসব এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। অনুমোদনহীন এসব ইটভাটা বন্ধে সম্প্রতি এক সভার আয়োজন করা হয়। এতে হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন ও সরকারি আদেশ নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।