লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মাছ চাষের নামে ডাকাতিয়া নদী দখল করে তার গলায় ফাঁসির মতো আড়াআড়ি জাল দিয়ে পানি প্রবাহ আটকে দিয়েছে স্থানীয় চিহ্নিত প্রভাবশালীরা। শুধু মাছ চাষিই নয়, নদীর তীরে মাজার, নদীর বুকে ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এবং ময়লা-আবর্জনায় ফেলে নদীটিকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে ওই প্রভাবশালীরা।
এতে নষ্ট হচ্ছে জীব-বৈচিত্র, বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।নদী ব্যবহারের সুবিধা-বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন এ অঞ্চলের লাখো মানুষ। ঠিকমত পানি নিস্কাশন না হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। দখলদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই পুরো খাল দখল হয়ে যাওয়ার আশংকা স্থানীয়দের।
দখলবাজদের কোনো তালিকা নেই বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তা ব্যক্তিরা। তারা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে নদী এলাকার কোনো সম্পত্তি কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি, যারা মাছ চাষ করছেন তারা অবৈধ।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, ডাকাতিয়া নদীর গলায় ফাঁস দেয়া হয়েছে, রায়পুর পৌরসভা, দক্ষিণ চরবংশী, উত্তর চরবংশী, উত্তর চরআবাবিল, দক্ষিণ চরআবাবিল, ইউনিয়ন অংশে।
ডাকাতিয়ার খুনি ব্যক্তিদের মধ্যে এলাকার ১৫ প্রভাবশালী নেতা রয়েছে। লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর পরবর্তীতে সংবাদে ওই সকল প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করবে।
সম্প্রতি উচ্চ আদালত সারা দেশে নদী ও জলাশয় দখলমুক্ত করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়। কয়েকটি জায়গায় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করলেও রায়পুরে অভিযান শুরু হয়নি। ‘দখল দূষণমুক্ত প্রবাহমান ডাকাতিয়া নদী, বাঁচবে প্রাণ-বাঁচবে প্রকৃতি’ এ স্লোগানে ডাকাতিয়া নদী ও জলাশয়গুলো দখলমুক্ত করে রায়পুর থেকে হাজীমারা পর্যন্ত নৌ-পথ চালুর দাবিতে স্থানীয় ডাকাতিয়া সুরক্ষা আন্দোলন কমিটির উদ্যোগে বর্ণাঢ্য মানববন্ধনের আয়োজন হয়েছে।
জানা যায়, ডাকাতিয়া নদীটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে, কুমিল্লা-লাকসাম-চাঁদপুর হয়ে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌর শহরের ওপর দিয়ে হাজিমারায় মেঘনা নদীতে মিশেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৪১ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬৭ মিটার। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দখলে-দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে নদীটি। স্বাধীনতার পরও রায়পুর-হায়দারগঞ্জ সড়কে নদীর ওপর ছিল একটি কাঠের সেতু। কিন্তু এখন রাস্তার দৃশ্য দেখে বোঝার উপায় নেই যে এখানে একটা নদী ছিল। কারণ সেতুর দুই পাশে ইজারা নেওয়ার নামে বড় বড় স্থাপনা ও দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
উত্তর পাশেই ছিল রায়পুর বাজার লঞ্চঘাট, যেখানে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে লঞ্চ ও বড় বড় নৌকা আসা-যাওয়া করত। এ নদী দিয়ে বরিশাল, ভোলা, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মালামাল পরিবহন করা হতো বলে স্থানীয়রা জানান। নদীর ওপর রাস্তা ও ভূমিদস্যুদের স্থাপনা নির্মাণের কারণে স্বাভাবিক গতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় এখন বন্ধ হয়ে গেছে সব নৌ-চলাচল। একইভাবে রায়পুর মহিলা কলেজের সামনে নদী ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে একাধিক কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এর আশপাশের ৮-১০টি স্থানে বাঁশ ও জাল দিয়ে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা। রায়পুর পৌর শহর থেকে ও সোলাখালী ব্রিজ এলাকাসহ প্রায় ১৬ কিলোমিটার জুড়ে এমনই চিত্র নদীটির। ফলে নদীর পানি ব্যবহার, মাছ ধরা ও নদীপথে চলাচল করতে পারছেন না এ অঞ্চলের বাসিন্দারা।
এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষক, বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, নদীটি খনন করে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে দেওয়া ও দখল উচ্ছেদ করে প্রতিবন্ধকতা দূর করা।
0Share