তাবারক হোসেন আজাদ: প্রায় ৭ বছর আগে আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় সভায় লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা পরিষদের ভিতরে একটি কেজিস্কুল ও ইউএনও’র বাস ভবনসহ ভবনগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করন করা হয়। কিন্তু সেই ভবনগুলোতে উপর দিয়ে রং লাগিয়ে আতঙ্কের মধ্যে বসবাস এবং দাপ্তরিক কাজ চলছে। এছাড়াও পৌরসভার ভবনসহ শহরে আরো ৭০টি ঝুঁকিপর্ণ ভবনে অসংখ্য পরিবারও আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছেন।
মঙ্গলবার (২০ আগষ্ট) উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় সভায় বিষয়টি পূণরায় উত্থাপন করা হয় এবং দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যাক্ত ভবনগুলো ভেঙ্গে নতুন ভবন করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
উপজেলা ও পৌরসভা কার্যালয় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে তাতে সাইবোর্ড দিয়ে ভবন ব্যবহার না করার জন্য নাগরিকদের সতর্ক করা সত্ত্বেও তা মানা হচ্ছে না। এতে করে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের পাশাপাশি বড় ধরণের ঝড়-তুপান হলে হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে অনেক ভবনের বয়স শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ভবনগুলো ১৮৬৪ থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছে।
রায়পুর পৌরসভা ও ইউএনও’র কার্যালয় থেকে উপজেলা পরিষদের ভিতরে একটি কেজি স্কুলসহ ২০টি ও শহরের ৭০টি আবাসিক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি সরকারি ও ৭০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন। ভবনগুলো আবাসিক ও অফিস ভবন।
ভবনগুলো হলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাস ভবন, তার পাশেই শিশু নিকেতন একাডেমী ভবন, বিআরডিপি’র ২টি গার্ডসেট, মার্কেটিংভবন, ট্রেনিং সেন্টার, উপজেলা বন কার্যালয়, পরিসংখ্যান কার্যালয়, আনসার উন্নয়ন ব্যাংক কার্যালয়, কৃষি কার্যালয়, প্রাণি সম্পদ কার্যালয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়সহ ২০টি সরকারি আবাসিক ভবন।
এছাড়াও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভা কার্যালয়ও রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করতে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল দুপুরে জরুরি বৈঠক করে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্তের জন্য এ সময় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়। তখন প্যানেল মেয়র কাজী নাজমুল কাদের গুলজার কে আহ্বায়ক করে গঠন করা কমিটির অন্যরা হলেন – সদস্য সচিব পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এটিএম সাদেক, সদস্য পৌরসভার সচিব মো. আলাউদ্দিন, সহকারী প্রকৌশলী জুলফিকার হোসেন ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী দিলিপ কুমার দে।
জানাযায়, পৌরসভা শহরসহ ৭০টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার অনেক আগেই এসব ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে পৌরসভার ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বেশি। ধীরেধীরে পৌর ভবনের ফাটল বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে কর্মচারীরা আতঙ্কে রয়েছেন।
রায়পুরের পৌর মেয়র ইসমাইল খোকন জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্তের জন্য তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। পৌর ভবনের পলেস্তারা ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে এটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তারপরও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ ও ইউএনও শামীমা বানু শান্তি বলেন, নিজেদের ও কর্মকর্তাদের বাস ভবনসহ কয়েকটি প্রশাসনিক কার্যালয় ঝূকিপূর্ণ রয়েছে। বিআরডিপির ৪টি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষনার পরও ভবন না থাকায় তা নতুন করে পলেস্তার ও রং লাগিয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। নতুন ভবন তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বাজেট চাওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফেরদাউস জামান বলেন, প্রতি বছরে গণপূর্ত বিভাগ থেকে শতবর্ষী ভবনগুলো কী পর্যায়ে আছে তা পরীক্ষা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা অবগত করা হয়। সুউচ্চ ভবন নির্মাণের সময় সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস অনাকাঙ্খিত প্রাণ হানি ঘটাতে পারে।
0Share