এমআর সুমন: গত কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণের ফলে লক্ষ্মীপুর-চাঁদপুর সেচ প্রকল্প (সিআইপি) এলাকার ভেতরে রায়পুর উপজেলার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১১ হাজার ২ হেক্টর রোপা আমন ফসলি জমি পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় চলতি বছর আমন উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অনিশ্চিত হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এতে চাষিরা ক্ষতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এছাড়াও টানা বৃষ্টিতে ও রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে নিন্ম আয়ের মানুষেরা।
বন্যা নিয়ন্ত্রন, জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানসহ পানি নিষ্কাষনের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকা জলাবদ্বতা মুক্ত রাখার জন্য রায়পুর, রামগঞ্জ, লক্ষীপুর সদর (আংশিক),ফরিদগঞ্জ, হাইমচর ও চাঁদপুর সদর উপজেলা (আংশিক) প্রকল্পের আওতাধীন ’৭৫ সনে সিআইপির কার্যক্রম শুরু হয়।
সোনাপুর গ্রামের শাহ আলম, রুহুল আমিন, চরআববিল গ্রামের খোরশেদ মনির আহমদ, চরপাতা গ্রামের পেয়ার আহমদ, চরবংশী গ্রামের নুরনবী, নুর হোসেনসহ স্থানীয় বহু কৃষকরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে গত আগষ্ট মাসেও বৃষ্টি হতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় অনেক কৃষকের বীজতলা ও রোপা আমন ক্ষেত দুই দফা বিনষ্ট হয়েছে। বর্তমানে ফের জলাবদ্ধতায় তৃতীয় দফা লাগানো আমন ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোডের্র খাল দখল করে বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ করার কারণে সামন্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকরা। তঁরা আর জানান, গত ২৫ থকে ৩০ বছর ধরে লাগামহীন ভাবে তৈরী হয়ে আসা মনুষ্য সৃষ্ট এ সকল প্রতিবন্দ্বকতার কারনে ২২ হাজার ক্উিসেক পানি নিষ্কাষন ক্ষমতা সম্পন্ন রায়পুরের ৪ বেন্টের হাজিমারা রেগুলেটর দিয়ে প্রকল্পের পানি নিষ্কাষন কাজ মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছে।
গত শনিবর সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে রায়পুর উপজেলার চরআবাবিল, চরবংশী, চরমোহনা, চরপাতা, বামনী, সোনাপুরসহ ১০টি ইউনিয়নের বেশ কিছু নিচু জমি ও বিলে দৃশ্যত দুই-তিন ফুট উচ্চতার জলাবদ্ধতা। গেল আউশ মৌসুমেও এসব জমিতে ধানের আবাদ করা হয়নি। আগাছা, শাপলা ও শেওলায় ভরে গেছে এসব জমি। জলাবদ্ধতা দূর করার উদ্যোগও চোখে পড়েনি।
দক্ষিণ কেরোয়া গ্রামের কৃষক আবদুর মোতালেব জানান, পানি প্রবাহের খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ চরম উদাসীন।
চরআবাবিল ইউপি চেয়ারম্যান শহিদ উল্যা বিএসসিমহ আরও চাঁর জন চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, বেড়িবাঁধের ভেতরে অনেক খাল বেদখল হয়ে আছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এগুলো দখল করে স্থাপনা পেতে ব্যবহার করছেন। পাউবো কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। জলাবদ্ধতা দূর করারও উদ্যোগ নেই তাদের। এতে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন চাষিরা। জলাবদ্ধতা দূর করতে এবং অবৈধ স্থাপনা সরাতে পাউবোকে একাধিকবার জানানো হয়েছে।
সিআইপির সম্প্রসারণ ওভারসিয়ার (এসও) আলমগীর হোসেন বলেন, ফসল যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। সেদিকে মাঠ পর্যায় কর্তৃপক্ষ দ্রুত গতিতে জলাবদ্ধতা নিরুশনের জন্য হাজীমারা স্লুইসগেট দিয়ে পানি বের করা হচ্ছে। পাশাপাশি চরবগাদি পাম্প হাউজের ১২’শ কিউসেকের ৬টি পাম্প মেশিন দ্বারায় বিরতিহীন ভাবে প্রকল্পের ভিতর হতে পানি বেক করা হচ্ছে। এতে আশা করা যায় জলাবদ্ধতা কৃষকের ক্ষতি হবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমন বলেন, চলতি মৌসুমে রায়পুর উপজেলায় ১১ হাজার ২’শ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। আগের চেয়ে গত কয়েক দিনে টানা ভারি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বেড়ে জমিতে গভীর জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে চলতি মৌসুমে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী বলেন, উপজেলা উন্নয়ন সভার সদস্য হওয়ার পরও পাউবোর কেউ উন্নয়ন সভায় উপস্থিত থাকেননা। অফিসেও তাদের কাউকে পাওয় যায়না। এতে উপজেলা প্রসাসনের সাথে পাউবোর কাজের সমন্বয় করা যাচ্ছনা।
0Share