এমআর সুমন, রায়পুর: বর্তমান ২০২১ সালের করোনা পরিস্থিতিতে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় ত্রাণ তৎপরতা মাঠে তেমন কেউ নেই বললেই চলে। অথচ ২০২০ সালে এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরাসহ সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ দেওয়া নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল।
নগদ অর্থ থেকে শুরু করে চাল ডাল তেল চিনি পেঁয়াজসহ যাবতীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ভোগ্যপণ্য পৌঁছে গিয়েছিল দরিদ্র, গরিব মানুষেরসহ মধ্যবিত্ত কাছে। তবে ওই এমপি ও মেয়র নির্বাচন প্রাক্কালের কিছু সময়েও ছিলো। তখন রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, শিল্পপতি ব্যবসায়ী ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আয় হারানো মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেয় ত্রাণ।
উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনও বিভিন্ন সোর্স থেকে ত্রাণ নিয়ে হাজির হয় অসহায় মানুষের দ্বারে। এ কারণে প্রায় তিন মাস লকডাউন থাকার পরও মানুষের দুঃখ-কষ্ট খুব একটা আঁচ করা যায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ত্রাণ সহায়তার চিত্র প্রতিদিন উঠে আসে। কিন্তু এবার চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রায়পুর উপজেলার চলমান কঠোর লকডাউনে রিকশাচালক, গাড়িচালক, দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক, দোকানদার, ফুটপাতের ছোট ব্যবসায়ী এমনকী খেটে খাওয়া কর্মজীবীরা এখন ঘরবন্দি। লকডাউনে তারা কাজ হারিয়েছে। আয়-রোজগার বলতে কিছু নেই। চরম কষ্টে তারা দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু সরকারি ভাবে অল্প কিছু ত্রাণ ফেলেও জনপ্রতিনিধিসহ বেসরকারিভাবে কোনো ত্রাণ সহায়তা সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন না। এদিকে লকডাউনের মেয়াদ ৫ আগষ্ট থেকে ১০ অগষ্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। হয়তো আরো বাড়তে পারে।
এ অবস্থায় আয়-রোজগার হারানো হাজার হাজার মানুষ চোখে শুধু অন্ধকার দেখছেন। পৌর শহর এলাকার আলম নামের এক রিকশাচালক (৩ আগষ্ট) সকালে দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলেন, ভাইরে ভীষণ কষ্টে আছি। এবারের লকডাউনে কেউ কোনো সাহায্য করেনি। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কত যে কষ্টে আছি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। টানা লকডাউনের কারণে আমার মত হাজার হাজার দিনমজুর যারা তারা এখন গৃহবন্দি। সবকিছুই বন্ধ। যে কারণে কোনো আয় নেই।
নতুন বাজার এলাকার ইজিবাইক চালক খোকন বলেন, ইজিবাইক নিয়ে রাস্তায় বের হতে দিচ্ছে না। অনেক কষ্ট করে মাঝে মধ্যে আইন ভেঙ্গে পেটের দায়ে বের হচ্ছি। আমাদের প্রতিদিন আয় প্রতিদিন ব্যয়। গত বছর লকডাউনের সময় অনেকে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু এবার কেউ কোনো সাহায্য করেনি। আমাদের বসিয়ে রেখেছে কিন্তু কোনো সহযোগিতা করছে না।
উপজেলা আওলীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র ইসমাইল খোকন বলেন, গত বছর যেভাবে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে এসেছিল এবার সেরকমটি দেখা যাচ্ছে না। কারণ গত বছর টানা তিন মাসের লকডাউনসহ নানা কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেননি অনেক ব্যবসায়ী। বড় ব্যবসায়ীরাও বড় ধাক্কা খেয়েছেন। অনেকেই ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। মূলত সে কারণেই এবার ত্রাণ তৎপরতা কম।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী বলেন, সরকার ও আমার সাধ্য অনুযায়ী এবারও অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক মধ্যবিত্ত পরিবারে মধ্যে বিতরণ শেষ হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে যা চলতে থাকবে। অনুদান যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ তা বিতরণ করা হবে। গত বছরের মতো এবারও সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান মানুষকে করোনা সংকট মোকাবিলায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানান তিনিও।
0Share