লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন রানার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে অনাস্থা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকালে ৮জন ইউপি সদস্য অভিযোগ (মেম্বার) লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অনাস্থা পত্র দাখিল করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ সফিউজ্জামান ভূঁইয়া পত্রটি গ্রহণ করেন।
ইউপি সদস্যদের লিখিত অভিযোগে জানা যায়, বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের অনুমতি ছাড়াই চেয়ারম্যান হোসেন রানা প্রায়ই চীনে যাতায়াত করেন। তিনি সেখানে থান কাপড়ের ব্যবসা করেন। এতে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ তার আত্মীয়-স্বজনদের পাইয়ে দেন। বিনামূল্যের ঘর দিতে কয়েকজন গ্রাহকদের কাছ থেকে ২০ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান নিজে ও ঘনিষ্টদের মাধ্যমে কাজটি করেছেন। তার বিরুদ্ধে সালিসি বৈঠকে বিচারের নামে সাধারণ মানুষকে মারধর ও ছাত্রদের চুল কর্তন করার অভিযোগও আলোচিত।
অনাস্থা প্রস্তাবকারী ইউপি সদস্যরা হলেন মোস্তাফিজুর রহমান, সুলতানা রাজিয়া, মো. শেখ ফরিদ, মো. নুরনবী, নরুল আমিন, হোসনেয়ারা বেগম, আবুল কাশেম মোল্লা ও মোহাম্মদ হোসেন বাবুল। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান রানা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চীনে নোয়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন রানার থান কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে। এজন্য তিনি বছরের অধিকাংশ সময়ই দেশের বাইরে অবস্থান করেন। দেশের বাইরে যেতে সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুমতি নেওয়ার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান তা মানছেন না। পরিষদের মাসিক ও প্রকল্প নিয়ে কোন সভা করা হয় না। পরবর্তীতে সভাগুলোর রেজিষ্ট্রার খাতায় বাধ্য করে ইউপি সদস্যদের স্বাক্ষর নেন। এতে ইউপি সদস্যরা ক্ষুদ্ধ। ২০১৯ সালে সরকারি বরাদ্ধের বিনামূল্যের ঘর বোন জামাই হাসান ও ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ফারুককে দেওয়া হয়। তার বোনকে দিয়ে আরেকটি ঘরের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন চেয়ারম্যান। উপকারভোগী না হলেও নিজের অনুসারীদের বিধবা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধি, মাতৃত্বকালীন ভাতা ও সোলার পাইয়ে দেন। তিনি ১৮ লাখ টাকার ইজিপিপি প্রকল্পের ৩০ শতাংশ ও ৪০ দিনের ৬টি ইজিপি প্রকল্প থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ১০টি গভীর নলকূপ দিতে ও স্থাপন করতে চেয়ারম্যান রানা ৮ হাজার টাকার স্থলে গ্রাহকদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে তিনি পকেট ভারি করেছেন। তার যোগসাজশে চাচাতো ভাই ছাত্রলীগ নেতা হারুন মিঝি স্বাক্ষর দিয়ে কয়েকজন দুঃস্থ নারীর চাল আত্মসাৎ করে। পরে জানাজানি হলে ওই চাল ফেরত দিতে বাধ্য হয়। পরিষদের বরাদ্ধ হওয়া প্রকল্প তিনি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। তার বিরুদ্ধে জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদসহ যেকোন কাজের জন্য টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় গত বছর কয়েকজন ভূক্তভোগী অভিযোগ করলে আদালতে হাজির হয়ে ক্ষমা চান তিনি। এসময় তিনি ভবিষ্যতে এমন কাজ না করার অঙ্গীকার করেন। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ইউপি সদস্য শেখ ফরিদ ও নুরুল আমিনকে মারধর করা হয় বলে তাদের অভিযোগ। এনিয়ে রামগঞ্জ থানায় পৃথক দুটি মামলা চলমান।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ও শেখ ফরিদ জানান, ইজিপির ৪০ দিনের প্রকল্প কাজের শ্রমিকদের কয়েকজন বিদেশ ও কয়েকজন মারা গেছেন। স্বাক্ষর জালিয়াতি করে চেয়ারম্যান প্রতিবছর তাদের নামের টাকা উত্তোলন করে হাতিয়ে নেন। এসব জালিয়াত কাগজপত্র তাদের কাছে রয়েছে।
জানতে চাইলে নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন রানা বলেন, গত ১৭ মাস আমি দেশের বাইরে যায়নি। আমি রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো ইউপি সদস্যরা স্বার্থ উদ্ধারের জন্য করেছেন।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সফিউজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, চেয়ারম্যানের অনিয়মের বিষয়ে অনাস্থার অভিযোগপত্রটি পেয়েছে। এটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0Share